You are currently viewing অনলাইন বিজনেস করতে হলে কি ওয়েবসাইট জরুরি?

অনলাইন বিজনেস করতে হলে কি ওয়েবসাইট জরুরি?

বহু দিন পর দুই বন্ধু একে-অপরের দেখা পেলো। দুইজনই অনলাইন বিজনেস করা শুরু করেছে গত ৫ বছর আগে থেকেই। আজ এতোদিন পর এসে এক বন্ধু দুদিন আগেও কোম্পানিতে ২৫ জনকে নিয়োগ দিতে পারলেও অপর বন্ধু বহু আগেই বিজনেস ছেড়ে দিয়েছে। এর মূল কারণ হলো একটি ওয়েবসাইটের অভাব।  আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে অনলাইনে যেকোনো ব্যবসা বা পণ্যের প্রমোশনের জন্য ফেইসবুক খুবই কার্যকরী একটি মাধ্যম হলেও ধীরে ধীরে এর চাইতে ওয়েবসাইটের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে ফেইসবুক পেইজ মূলত একটি প্রমোশনাল  টুল। তবে ওয়েবসাইটের চাইতে এর গুরুত্ব বেশি নয়। 

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেনাবেচা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কারণ সচেতন ক্রেতারা ওয়েবসাইট নির্ভর ব্যবসাগুলোকে নির্ভরযোগ্য মনে করছেন। এক্ষেত্রে বিক্রেতারা বিক্রেতারা নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানিয়ে নিজেদের ব্র্যান্ডিং করছেন। চলুন এবার ফেইসবুক পেইজ কিংবা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি অনলাইন বিজনেস এর ক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইট কতটা জরুরি সে-সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। 

 

আপনি কখনোই বলতে পারেন না যে ফেইইসবুক পেইজটা আপনার নিজের

একটু ভেবে দেখুন তো ফেইসবুক পেইজের পাশাপাশি আজ যদি আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকতো তাহলে কোন মাধ্যমটিকে আপনার বেশ আপন আপন লাগতো? নিশ্চয় ওয়েবসাইটকে!

কেননা এটি আপনার নিজস্ব পরিচয়, নিজস্ব সাইট, নিজস্ব মাধ্যম। অন্যদিকে ফেইবুক একেবারেই তার উল্টো। এতে তৈরি করা প্রোফাইল, গ্রুপ, পেইজের জন্যেও একই কথা! এর কোনোটিই আপনার নয়। সুতরাং বিজনেস করতে হলে ওয়েবসাইট জরুরি৷ এমনকি শুধুমাত্র ফেইসবুকের মাধ্যমে বিজনেস করতে গেলেও একটি ওয়েবসাইট থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বলে আমি মনে করি৷ ফেইসবুক কতৃপক্ষ চাইলেই যেকোনো সময় নিজের কোম্পানির উপর নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে! হুট করে যে কারো আইডি ডিজেবল, গ্রুপ ভ্যানিস করে দেওয়া, পেইজ এড শো অফ করে দেওয়া কিংবা আস্ত ফেইসবুককেই গায়েব করে দিতে পারে। এই অধিকার তার আছে। এখন চিন্তার বিষয় হলো ঠিক ওই মুহুর্তে আপনার কি করার থাকবে?

এই যে আপনি ওয়েবসাইটের গুরুত্বকে একপাশে রেখে কেবল একটি ফেইসবুক পেইজকেই পুঁজি করে বিজনেস পরিচালনা করছেন, তা কি হুট করেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে না? অবশ্যই পারে।

এক্ষেত্রে অনলাইন বিজনেসে একটি স্থায়ী ঠিকানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের বিজনেসকে রিস্কে রেখে রান করাতে না চাইলে একটি ওয়েবসাইট হতে পারে আপনার পারফেক্ট সমাধান। ওয়েবসাইটটি যেমন আপনার হবে তার ঠিকানাসহ পুরোটাই থাকবে আপনার দখলে। সুতরাং এতে কাজ করার মাধ্যম হারানোর কোনো সুযোগ নেই। 

 

ওয়েবসাইট হচ্ছে আপনার অনলাইন বিজনেসের রাস্তার মতো

একটি ওয়েবসাইটকে আপনি আপনার অনলাইন বিজনেসের রাস্তা হিসেবে ধরে নিতে পারেন। আপনি নিশ্চয় অনলাইন বিজনেসের “Hub” এর সাথে পরিচিত? একটি ওয়েবসাইটও তেমন অনলাইন বিজনেসের জন্য আপনার অনলাইনের উপস্থিতির প্রমাণস্বরূপ কাজ করে। 

অন্যান্য সোশাল মিডিয়ায় যেখানে সেসব কোস্পানির পরিচয় বিস্তারিত থাকে এবং আপনার পরিচয় হাইলাইট করার সুযোগ কম থাকে,সেখানে একটি ওয়েবসাইট চাইলে আপনি সব ধরনের ইনফরমেশন রাখতে পারেন। হতে পারে সেটি আপনার কোম্পানি সম্পর্কে, সার্ভিস সম্পর্কে কিংবা আপনার সম্পর্কে। 

ফেইসবুক একটি সম্পূর্ণ ফ্রি প্ল্যাটফর্ম হলেও সেটিকে মনের মতো করে সাজিয়ে গ্রাহাকের সামনে উপস্থাপন করতে গিয়ে নানানরকমের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। যা দূর করতে কাজ করে যেকোনো কোম্পানি রিলেটেড ওয়েবসাইট। ব্যাাপরটি ঠিক নিজের ঘরে ইচ্ছেমতো পণ্য সাজানোর মতোই। নিজের মতো করে সাজানোর পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট আপনাকে অর্গানিক অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে৷ কেননা বিশ্বের একটি নির্দিষ্ট দল ফেইসবুকে খুব একটা সময় দিতে পারে না। ফলে আপনিও মিস করতে পারেন একটি বড়সড় ক্লায়েন্ট টিম। ঠিক এ কারণেই যেকোনো ওয়েবসাইটকে অনলাইন বিজনেসের রাস্তা মনে করা হয়। 

রেডি ই-কমার্স

 

ওয়েবসাইট আপনার ব্রান্ডিং এবং পেশাদারিত্বকে প্রকাশ করে

আপনার বিজনেসের জন্য একটি ওয়েবসাইট থাকা মানে নিজের দক্ষতাকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারার নতুন একটি মাধ্যম উন্মুক্ত হওয়া। যা একটি ফেইসবুক পেইজ বা আইডি কিংবা গ্রুপের মাধ্যমে সম্ভব নয়। কারণ সব ফেইসবুক পেইজ দেখতে একই রকম। চাইলেই আপনি এটিকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিছু কিছু ব্যাপারগুলিকে নিজের মতো করে তৈরি করে নিতে পারলে পুরোটা পারবেন না কিন্তু! ফেইসবুক পেইজ, গ্রুপ কিংবা আইডিতে কেবল প্রোফাইল ফটো আর কভার ফটো এবং ডিটেইলসগুলিকে নিজের মতো সাজাতে পারবেন। আরকিছুই না। এই কারণেই আপনি কখনোই ওয়েবসাইট এর বিকল্প হিসেবে ফেইসবুককে কখনোই বিবেচনা করতে পারেন না।

মনে রাখবেন একটি ওয়েবসাইট খোলা মানেই নতুন দুয়ার খুলে যাওয়া। একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি নিজের প্রোডাক্ট সুন্দরভাবে সাঁজানোর পাশাপাশি নিজেই অনেকবেশি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হবেন। নিজের মত করে আপনার কাস্টোমারদের পরিচালনা করতে পারবেন। সাথে দক্ষ পেশাদারিত্বও প্রকাশ পাবে।

ফেইসবুক পেইজের কার্যকারিতাতে অনেক সীমাবদ্ধতা

ফেইসবুক পেইজ কিছুটা কার্যকর হলেও এর সীমাবদ্ধতা খুব বেশি। ডিটেইলসটুকু সাজাতে গেলেও আপনাকে সীমাবদ্ধতার রীতিতে আটকে যেতে হবে। একটি ফেইসবুক পেইজে আপনি কি সার্ভিস দিচ্ছেন, সেগুলার প্রাইসিং কেমন, আপনার টিম মেম্বারদের পরিচিতি এবং তাদের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য একসাথে যুক্ত করাটাই দুষ্কর। কিন্তু সেই একই কাজ একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোটিগুণ ভালোভাবে করা যায়। সুন্দরভাবে উপস্থাপনও করা যায়। 

 

কম্পিটিশনে টিকে থাকতে হলে ওয়েবসাইট থাকতেই হবে

বর্তমান যুগে অনলাইন বিজনেসে কমপিটিশন বেড়ে গেছে। সুতরাং কম্পিটিশনে টিকে থাকতে হলে ওয়েবসাইট থাকতেই হবে। যাদের কেবল ফেইসবুক পেইজ রয়েছে তাদের চাইতে যাদের ওয়েবসাইট এবং ফেইসবুক পেইজ দু’টোই রযেছে তারা এই কম্পিটিশনের যুগে টিকে থাকবে। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইট ভালো না হলেও ওয়েবসাইট আছে এই ভেবে কোম্পানি বাড়তি গুরুত্ব পাবে। সুতরাং যারা এই কম্পিটিশনের যুগে অনলাইন বিজনেস করছেন তারা আর দেরি না করে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করিয়ে নিন। 

মার্কেটিং

ওয়েবসাইট এর ডাটা নিয়ে রি মার্কেটিং করা 

আপনি কি আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে রি মার্কেটিং করতে চান? এক্ষেত্রে ওয়েবসাইট হতে পারে আপনার হেল্পিং হ্যান্ড। আপনার ফেইসবুক পেইজকে যদি আপনি ওয়েবসাইটের সাথে কানেক্ট করতে পারেন, তবে এসম্পর্কিত অর্থ্যাৎ ভিজিটরের কিছু ডাটা আপনার কাছে থাকবে। আপনি চাইলে সেসব নিয়েও মার্কেটিং করতে পারেন। 

 

ওয়েবসাইট হলো লাইফ টাইম অ্যাসেট

যারা অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র ফেইসবুকের উপর নির্ভরশীল তারা হয়তো কোনো না কোনো সময় এসে বাধাপ্রাপ্ত হবেন। কারণ ফেইসবুক কতৃপক্ষের পূর্ণ অধিকার রয়েছে নিজের ইচ্ছামতো এটি পরিচালনর করতে পারার। সুতরাং জেনে-বুঝেই অনলাইন বিজনেসের প্ল্যান করুন।

 

আমরা দিচ্ছিঃ-

অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে তো একটি ওয়েবসাইট কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ সেটি বুঝতে পারলেন! সাথে এটাও নিশ্চয় বুঝে গেছেন যেনো-তেনো সাইট বানালেই ওয়েবসাইটের অভাব দূর হবে। এক্ষেত্রে দরকার মানসম্মত ওয়েবসাইটের। যা খুব স্বল্প খরচেই আমরা দিচ্ছি। ওয়েবসাইট সম্পর্কিত যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন। আশা করি চাহিদার চাইতেও বেশিকিছু পাবেন।

 

শেষ কথাঃ

প্রতিটি অনলাইন বিজনেসে একটি ওয়েবসাইট থাকা মানেই সফলতার হাতিয়ার থাকা। যারা ইতিমধ্যেই অনলাইন বিজনেস শুরু করে দিয়েছেন তারা যত দ্রুত সম্ভব একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিন। আর যারা এখনো কোনো বিজনেস শুরু করেননি তবে প্ল্যানিং করছেন তারা সবার আগে ওয়েবসাইটের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন। ফলে এক্ষেত্রে সফল হওয়াটা খুব সহজ হয়ে যাবে।

Facebook Comment