আজ আমরা আলোচনা করবো ওয়েবসাইট এবং ল্যান্ডিং পেইজ কি এবং এদের মাঝে কি কি পার্থক্য কড়াভাবে উপলব্ধি করা যায় সে সম্পর্কে। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
ওয়েবসাইট কি?
ওয়েব পৃষ্ঠা, ছবি, অডিও, ভিডিও ও অন্যান্য ডিজিটাল তথ্যের সমষ্টিকে ওয়েবসাইট বলা হয়। যা ওয়েব সার্ভারে থাকে।
ওয়েব পেইজ কি?
এক ধরনের এইচটিএমএল ডকুমেন্টকে সাধারণত ওয়েব পেইজ বলা হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এবং ওয়েব ব্রাউজার এর সাহায্যে এটি সহজেই ব্যবহার করা যায়। আজকের দিনে বেশিরভাগ মানুষই ইন্টারনেট ব্যবহার করায় এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট এবং ওয়েব পেইজ ভিজিট করে। অনেকগুলি ওয়েব পেইজের সমষ্টির দ্বারা তৈরিকৃত ওয়েবসাইটের মূল ভিত্তি হলো এই ওয়েব পেইজ। আলাদা আলাদা ইউ আর এল অ্যাড্রেসের মাধ্যমে যে কেউ নির্দিষ্ট ওয়েব পেইজট গ্রাহকেরা ব্যবহার করতে পারে।
প্রতিটি ওয়েব পেইজে বিভিন্ন ধরনের ইনফরমেশন, এইচটিএমএল ডকুমেন্ট লেখা থাকে। যার কারণে এটিকে এইচটিএমএল ডকুমেন্টও বলা হয়। এক্ষেত্রে অনেকসময় অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষাও ব্যবহার হতে পারে। প্রতিটি ওয়েব পেইজকে ইউজারের সামনে প্রদর্শন করানোর জন্য পেইজটিকে সার্ভারের সাথে কানেক্ট করতে হয়। মূলত সেখানেই নির্দিষ্ট ওয়েবপেজের সমস্ত ডাটা জমা হয়। যার কারণে কোন ভিজিটর নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের ওয়েব পেইজে আসার পর সকল ডাটা দেখতে সক্ষম হয়।
ল্যান্ডিং পেইজ কি?
মার্কেটিং অথবা অ্যাডভার্টাইজিং ক্যাম্পেইন পরিচালনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা একটি স্ট্যাটিক ওয়েব পেইজকে সাধারণত ল্যান্ডিং পেইজ বলা হয়। গুগল, বিং, ইউটিউব এবং ফেসবুক পেইজ থেকে ভিজিটরদের লিড কালেক্ট করার জন্য এই ল্যান্ডিং পেইজ ব্যবহৃত হয়। যে পেইজে ‘অ্যাড’ এর মাধ্যমে ভিজিটরদের ল্যান্ড করানো হয় সেই পেইজ এই ল্যান্ডিং পেইজের আওতাধীন। লিড ক্যাপচার পেইজ, সিঙ্গেল প্রোপার্টি পেইজ, স্ট্যাটিং পেইজ এবং ডেসটিনেশন পেইজ হলো ল্যান্ডিং পেইজের পরিচিত সিনোনিম।
এবার চলুন প্রাতিষ্ঠানিক সংজ্ঞার পাশাপাশি বিস্তারিত জানতে কন্টিনিউ করি। একটি ল্যান্ডিং পেইজ সাধারণত অনেকটা ওয়েব পেইজের মতোই হয়। পাশাপাশি এটি ওয়েব সাইটেরই একটি অংশও বটে।
নির্দিষ্ট কোন টপিককে টার্গেট করা হয় ল্যান্ডিং পেইজ ডিজাইন করার উদ্দেশ্যে। কনভার্সন রেট বাড়ানোর এবং ওয়েব সাইটের সেলস বাড়ানোর মতো বড় বড় উদ্দেশ্যে হাসিলের ক্ষেত্রে এই ল্যান্ডিং পেইজ ব্যবহৃত হয়। সাথে ‘লিড/কাস্টমারের ডাটা’ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলি। যা পরবর্তীতে টার্গেটেড অডিয়েন্সে পরিনত হতে খুব একটা সময় নেয় না। এটি সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো পন্যের মার্কেটিং এর জন্য তৈরি করা হয়।
ওয়েবসাইট এবং ল্যান্ডিং পেইজ এর মধ্যে পার্থক্য কি?
উপরের আলোচনা থেকে আপনি বুঝতেই পারছেন ল্যান্ডিং পেজ এবং ওয়েবসাইট দুটি ভিন্ন ভিন্ন দুটি অংশ। চলুন ব্যাপারটা সম্পর্কে খোলাসা ধারণা তৈরি করা যাক।
ল্যান্ডিং পেইজের ক্ষেত্রে তথ্যের দিক দিয়ে অফার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা দেওয়া থাকে। অন্যদিকে ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে আপনার ব্যবসার ধরন সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা থেকে শুরু করে অফারসহ পুরো কোম্পানি বা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়ে থাকে।
ল্যান্ডিং পেইজে অডিয়েন্স হিসেবে থাকে শুধু অফার সম্পর্কে আগ্রহী ব্যাক্তিরা। এর বাইরে কেউই তেমন একটা ল্যান্ডিং পেইজের অডিয়েন্স হিসেবে থাকে না। অন্যদিকে ওয়েবসাইটে সাধারণ বিষয় নিয়ে আগ্রহী ব্যাক্তিরাও অডিয়েন্সের কাতারে পড়তে পারে। হতে পারে তারা সাইটে জানার জন্য এসেছে কিংবা কোনো সার্ভিস বা পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নিতে এসেছে।
ল্যান্ডিং পেইজের নেভিগেশনের ক্ষেত্রে লিমিটেড নেভিগেশনকে সবসময় প্রাধান্য দেওয়া হয়। অর্থ্যাৎ এতে নেভিগেশনের সংখ্যা একেবারেই কম থাকে। অন্যদিকে ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে সকল নেভিগেশনই গ্রহণযোগ্য। এক্ষেত্রে এর সংখ্যা অনেকও হতে পারে।
ল্যান্ডিং পেইজের উদ্দেশ্য থাকে শুধুমাত্র অফারের পণ্য সেল করা। আবার ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানি বা সার্ভিস সম্পর্কে সকলকে জানানো।
উপরে আলোচনাটি পড়ে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন দুটি একেবারেই আলাদা অংশ এবং দু’টোর উদ্দেশ্যই আলাদা আলাদা। আপনার ওয়েবসাইটের দর্শক হলো তারাই যারা আপনার ব্যবসার ধরন এবং আপনার দেওয়া পণ্য এবং সার্ভিসের প্রতি আগ্রহী৷ উদাহরণস্বরূপ, আপনার ফ্যাশন সম্পর্কিত সাইটে ফ্যাশনের দিকে আগ্রহী ব্যাক্তিরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আরো জানতে বা আপনার অনলাইন স্টোর ব্রাউজ করতে আপনার ওয়েবসাইটে যেতে পারে।
অপরদিকে একটি ল্যান্ডিং পেইজ আপনাকে আরো লক্ষ্যযুক্ত গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করে থাকে। এই দলে উক্ত বিষয় সম্পর্কে ইতিমধ্যেই জানা ব্যাক্তিরাই বেশি থাকে।
অর্থ্যাৎ তারা আগেভাগেই সেই সার্ভিস, সেই প্রোডাক্ট, সেই অফার সম্পর্কে জানে কিংবা জেনে এসেছে। বর্তমানে ল্যান্ডিং পেইজে ভিজিট করার মূল উদ্দেশ্য হলো অফারটি সম্পর্কে আরেকটু নিশ্চিত হয়ে নেওয়া এবং প্রোডাক্ট বা সার্ভিসটি কিনে নেওয়া।
ধরুন, কেউ একজন তাদের এলাকায় ওয়েব ডিজাইনার খুঁজছেন। সার্চ রেজাল্টে তারা ল্যান্ডিং পেইজ খুঁজছেন এবং খুঁজে পেয়েছেনও বটে। পূর্বে থেকেই জানার কারণে পরবর্তীতে তারা উক্ত অফার সম্পর্কে আরেকটু নিশ্চিত হয়ে অর্ডারটি প্লেইস করে দিলেন।
আশা করি আপনি একটি ল্যান্ডিং পেইজ এবং একটি ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন। চলুন এবার এগুলি ব্যবহারের সঠিক সময় সম্পর্কে আলোচনা করি।
ওয়েবসাইট এবং ল্যান্ডিং পেইজ কখন, কি কাজে ব্যবহৃত হয়?
উপরের তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, একটি ওয়েবসাইট হলো অডিয়েন্সকে আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানানোর সর্বোত্তম উপায়। আপনি আপনার সার্চ ইঞ্জিন র্যাঙ্কিং উন্নত করতে, ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়াতে এবং অন্যান্য ধাপগুলিকে পরিপূর্ণ করতে আপনার ওয়েবসাইটটিকে ব্যবহার করতে পারেন। মূলত আপনার ওয়েবসাইট হলো আপনার ব্র্যান্ডের গল্প বলার এবং আপনার পণ্য বা সেবা প্রদানের কারণ ব্যাখ্যা করার আদর্শ জায়গা। আপনার ব্যবসা সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি পারফেক্ট মাধ্যম হলো এই ওয়েবসাইট।
একটি ওয়েবসাইটকে কিভাবে সাজাবেন?
একটি ওয়েবসাইট ল্যান্ডিং পেইজের চেয়ে অনেক বেশ লম্বা হওয়ার ফলে একসাথে অনেক তথ্য প্রদান করা সম্ভব হয়। একটি ওয়েবসাইটে আপনি যেভাবে নিজের ব্র্যান্ডের গল্প বলতে পারেনঃ-
About Page:
এবাউট পেইজে আপনি আপনার নিজের কথা, আপনার মিশনের কথা, মূল্যবোধ এবং প্রেরণা ব্যাখ্যা করতে পারেন।
FAQ Page:
এই পেইজে আপনি আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের জনপ্রিয় এবং বহুল আলোচিত বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিন।
Contact Page:
পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্ন কিংবা বিষয় সম্পর্কে জানতে মানুষকে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দিন এই পেইজের মাধ্যমে।
একটি ওয়েবসাইটের জন্য যেসব পেইজ খুবই প্রয়োজনীয়ঃ-
- প্রোডাক্টের ধরুন অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আলাদা করে সেসব প্রোডাক্টের ডেসক্রিপশন রেডি করুন এবং তা আপলোড করুন।
- আপনার দেওয়া প্রতিটি সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করুন যাতে ব্যবহারকারীরা সেগুলি আরো সহজে খুঁজে পেতে পারে।
- আপনি তাদের কাছাকাছি যে লোকেশনগুলি ব্যবহার করে সার্ভিস দিয়ে থাকেন, সেগুলি এড করুন। যাতে গ্রাহকের খুু্ঁজে পেতে সমস্যা না হয়।
- গ্রাহকের সাথে যোগাযোগের জন্য তাদের মতামত জানার জন্য ফোরামের ব্যবস্থা করুন।
- এসইও করুন।
আপনার ওয়েবসাইটের এরইও করে নিতে আজই যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে আমাদের রয়েছে সুদক্ষ এস ই ও এক্সপার্ট
কিভাবে ল্যান্ডিং পেইজ সাজাবেন?
চলুন ল্যান্ডিং পেইজ সাজানোর টেকনিক বা টিপস সম্পর্কে জেনে নিই।
ল্যান্ডিং পেইজের পোস্ট হেডলাইনে আপনি আসল সুবিধা ছাড়াও অন্যান্য সুবিধা গুলো সম্পর্কে বলতে পারেন। আপনার প্রোডাক্টের সাথে যদি আপনি কোনো ফ্রি অফারের ব্যবস্থা করে থাকেন তবে এখানে তা উল্লেখ করে দিতে পারেন।
সূচনা পর্বে ২/৪ তা লাইন এর মাধ্যমে পুরো পেইজে কি কি উল্লেখ করবেন তার সারমর্ম এড করে দিতে পারেন। পরবর্তীতে প্রতিটি সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করুন। ধীরে ধীরে আপনার অফারটা ট্রাফিকের কাছে গুরুত্বের সাথে সামনে আনুন।
আসল কথায় চলে আসার চেষ্টা করুন। এই অংশটাতে আপনি আপনার অফারটিকে কৌশলে সাবস্ক্রাইব করতে বলার চেষ্টা করবেন এবং গ্রাহককে রাজি করাবেন। চাইলে সাবস্ক্রাইব ফরমটি দিয়ে দিতে পারেন। যাতে গ্রাহকেরা তা ফর্মটি পূরণ করে নেয়।
একেবারে শেষের দিকে আপনি আপনার প্রোডাক্ট/ অফার এর সুবিধা ট্রাফিককে আবার মনে করিয়ে দিন। পাশাপাশি সাবস্ক্রাইবের ব্যাপারটিও মনে করিয়ে দিন।
শেষ কথাঃ
নিজেকে প্রমান করার সোজা উপায় হলো ল্যান্ডিং পেইজ। অপরদিকে নিজের কাজ বা সার্ভিসকে ছড়িয়ে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ওয়েবসাইট। আইটি সেক্টরে উন্নতি করতে চাইলে দুটো দিকই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং মানসম্মত ওয়েবসাইট এবং ল্যান্ডিং পেইজ সার্ভিস নিতে আজই যোগাযোগ করুন। শতভাগ কোয়ালিটিফুল সার্ভিস নিতে পারার ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।