যুদ্ধের ময়দানে আপনি যদি আপনার ঢাল-তলোয়ার ছাড়াই শত্রুর বিপক্ষে যুদ্ধে নেমে পড়েন, তাহলে কি আপনি যুদ্ধ করতে পারবেন কিংবা যুদ্ধে জয়ী হতে পারবেন? ঠিক তেমনি যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রেও আপনার পারদর্শীতা উপস্থাপনের জন্য পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট এর কোন বিকল্প নেই। বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাকি ১০ জনের মাঝে নিজেকে ইউনিক বা আলাদা হিসেবে তুলে ধরতে হবে। আর তাই সারা বিশ্বে পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং যেকোনো ক্ষেত্রেই নিয়োগকারী কিংবা বায়ারদের কাছে আপনার পূর্ববর্তী কাজের ধরন, প্রক্রিয়া, ফলাফল কিংবা পারদর্শীতা উপস্থাপন করতে একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট ছাড়া বিকল্প নেই। সিভি বা রিজিউমে আপনার কর্মক্ষেত্র, পরিধি ইত্যাদি সম্পর্কে উল্লেখ থাকলেও সবকিছু সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া যায় না। কিন্তু একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি ইতোপূর্বে যেসব ক্ষেত্রে, যেসব বিষয়ে কাজ করেছেন সেগুলো ভিজ্যুয়াল ভাবে উপস্থাপন করা যায়। যেটি নিয়োগকারীকে আপনার কাজ সম্পর্কে ধারণা রয়েছে এটি বুঝাতে সহায়ক এবং আপনার পোর্টফোলিও থাকা মানে আপনি যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রে অন্য প্রার্থীদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন।
পোর্টফোলিও কিঃ
আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন আর পোর্টফোলিও কি সে সম্পর্কে কিছুই না জেনে থাকেন, তাহলে এটা একটা অসম্ভব এবং বিশ্রী বেপার হয়ে দাঁড়াবে। ফ্রিল্যান্সারদের কাজ পেতে হলে সর্বপ্রথম যেটা দরকার সেটি হলো পোর্টফোলিও। সহজ ভাষায় বললে, পোর্টফোলিও হচ্ছে আপনার কাজ ও দক্ষতার সমষ্টি। অর্থাৎ আপনি যে কাজগুলো করে থাকেন সেই সব কাজের ডেমো বা নমুনা। মনে করুন আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার এবং আপনি আপনার ক্লায়েন্ট কে বললেন, এই কাজটি ২০০$ এ করে দিবেন। এখন, আপনার ক্লায়েন্ট আপনি কাজ এ কতটা দক্ষতা বা কাজ ভালো করতে পারেন কিনা, এটি না দেখেই আপনাকে ২০০$ দিয়ে দিবে? না এমন টা কখনো হয় না। কোন ক্লায়েন্টই আপনার কোন কাজের নমুনা না দেখে চাইবে না কাজ দিতে। কারণ, সে জানে না আপনি তার কাজটি সঠিক ভাবে শেষ করতে পারবেন কিনা। তাই আপনি যে কাজ গুলো ইতোমধ্যে শেষ করেছেন এবং সামনে যে কাজগুলো আরো করতে চান, এমন কাজের ডেমো গুলো যদি আপনি এক জায়গায় সাজিয়ে রাখেন, তাহলে কিন্তু আপনার ক্লায়েন্ট সেই কাজগুলো দেখে আপনার দক্ষতা সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে যাবে। সেই সাথে আপনাকে কাজ দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না। আপনি যে আপনার বেস্ট কাজ গুলো সাজিয়ে রাখলেন এক জায়গায়, এটিই হচ্ছে আপনার পোর্টফোলিও।
পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট কিঃ
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কাজগুলো সবাই কে দেখার সুযোগ করে দিন এবং আপনার সাথে যোগাযোগ করার সু্যোগ দিন। আপনি যদি ফটোগ্রাফার হয়ে থাকেন কিংবা লেখক হন, তাহলে আপনার নিজস্ব ব্লগ তৈরী করে সেখানে আপনার শিল্পকর্মগুলো উপস্থাপন করতে পারেন, ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে। একটি ব্যক্তিগত পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট এর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে একজন ব্যক্তিকে তার কর্মগুণ সহ সুন্দর ভাবে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করা। কারণ পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট টি একসাথে সারা বিশ্বের মানুষ দেখবে। এখানে আপনিই হলেন একটি ব্র্যান্ড। যদি আপনি ওয়েব ডিজাইনার / লেখক / ফটোগ্রাফার ইত্যাদি হন তাহলে অবশ্যই আপনার একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট থাকা উচিৎ।
পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট এর প্রয়োজনীয়তাঃ
ধরুন, আপনি একজন ফটোগ্রাফার। আপনি খুব ভালো ছবি তোলেন। গ্রামের মনোরম দৃশ্য অসাধারণভাবে তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু আপনার সেই ছবি গুলো ঐ ক্যামেরাবন্দি হয়েই রয়েছে। প্রচারের অভাবে তেমন প্রসারও হলো না। কিন্তু আপনি কি জানেন? বাংলাদেশের অনেক ফটোগ্রাফার দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছবি প্রদর্শনী করছে! হয়ত আপনিও ভালো ছবি তুলতে পারেন। তবে আপনি যদি ছবিগুলো কে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা নিজের পরিচিত সার্কেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন, তাহলে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে আপনাকে অনেক বেগ পেতে হবে। যারা এই প্রফেশনে উচ্চ আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তারা তাদের সেরা কাজগুলো শোকেজ করে রাখেন এবং ইন্টারনেটের সাহায্যে সেগুলো সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর, সেগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিনে নেন। এভাবে বিশাল অংকের টাকাও আয় হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন একজন ফটোগ্রাফারের একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট কতটা জরুরী!
শুধুমাত্র একজন ফটোগ্রাফারেরই পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট এর প্রয়োজন তা কিন্তু নয়, বরং আপনি যদি একজন ফ্রিলান্সার হন, যেমন – গ্রাফিক্স ডিজাইনার বা ওয়েব ডিজাইনার হলে আপনার ডিজাইন করা ডেমো সাইটগুলো তুলে ধরতে পারেন পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। তাছাড়া, আপনার ডিজাইনগুলো সাজিয়ে রাখতে পারেন। তাই বলা যায়, ডিজিটাল এই যুগে পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিজের পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট থাকা জরুরি কেনঃ
পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করা আপাত দৃষ্টিতে খুব জটিল ও ব্যয়বহুল মনে হলেও, বাস্তবে কিন্তু ততোটা কঠিন নয়। নিজের জন্য একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করার পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিক কারন রয়েছে। যেমন- আপনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে বিগত চার বছর যাবত একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে কর্মরত আছেন। আপনি আপনার পদে সেরা টা দিয়ে কাজ করছেন এবং আপনার কোম্পানি কে ইতোমধ্যে সেরা সাফল্য এনে দিয়েছেন। আপনার পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটে কোম্পানিতে যেসকল সাফল্য এনে দিয়েছেন সেগুলো তুলে ধরুন। আর যদি আপনি দলগতভাবে কাজ করে থাকেন, তাহলে দলে আপনার অবদান উল্লেখ করুন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। পূর্বে নিজের সিভি আপডেটেড রাখতে বলা হত, কিন্তু এখন নিজের পোর্টফোলিও আপডেটেড রাখতে বলা হয়ে থাকে। তাই, উক্ত ভাবে আপনি আপনার পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট আপডেটেড রাখতে পারেন। এতে করে পরবর্তীতে আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনার পদবী ও অবস্থান দুটোই বৃদ্ধি করে দিবে দিনে, সপ্তাহে বা মাসে ।
অল্প কিছু সময় এই ওয়েবসাইটের পেছনে যদি ব্যয় করেন, তাহলে যে সকল সুবিধা আপনাকে এনে দিবে তা অমূল্য। পরবর্তীতে যখন নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি খুঁজতে যাবেন তখন এই পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটটি হবে আপনার সিভি, এবং এই সিভি সেই পুরনো দিনের কাগজে ছাপানো নয় বলে, আপনি বাকি চাকরি প্রার্থীদের থেকে ১ ধাপ এগিয়ে থাকবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন, নিজের একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটটি কিভাবে সাজাবেনঃ
আপনার পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট টি সাজানোর জন্য আপনি সুন্দর একটি লোগো ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ওয়েবসাইটে ঢুকার পর প্রথমেই ভিজিটরের চোখে পড়ে একটি সুন্দর লোগো। এরপর সুন্দর একটি নাম নির্বাচন করুন কারণ একটি সহজ ও সুন্দর নাম সবাই মনে রাখার চেষ্টা করে। তাই পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট টি নিজের নামে না করে একটি সুন্দর নাম দিয়ে শুরু করুন । এতে করে ভবিষ্যতে আপনার কর্ম পরিসর কে প্রতিষ্ঠানের রুপান্তর করতে চাইলে সহজেই করতে পারবেন। এরপর আপনি “ট্যাগ লাইন” ব্যবহার করতে পারেন। এখানে থাকবে আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং আপনি কি ধরনের কাজ করেন তার সারর্মম। অর্থাৎ, আপনি কে? আপনি কি করেন? আপনি কি একজন ফ্রিল্যান্সার নাকি কোন কোম্পানি তে আছেন? ইত্যাদি এ জাতীয় প্রশ্ন গুলোর উত্তর ট্যাগ লাইনে রাখবেন। যেহেতু, আপনি একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরী করবেন, তাই আপনার ওয়েবসাইট টি কে এমন ভাবে উপস্থাপন করুন যেন ভিজিটরদের কাছে এটি আকর্ষণীয় হয়। যারা আপনার সাইট টি ভিজিট করবে তারা অবশ্যই আপনার অতীত কাজ গুলোর নমুনা ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো দেখার আগ্রহ জাগতে পারে। তাই আপনি আপনার করা প্রজেক্ট গুলোর ভাল কিছু ছবি, যদি সম্ভব হয় ডেমো দেখার ব্যবস্থা রাখতে পারেন। সেই সাথে, প্রতিটি প্রজেক্টের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে দিন। আরো ভাল হয় এর সাথে যদি আপনার কাস্টমারের মতামত দেওয়ার অপশন রাখেন। অর্থাৎ বর্তমানে যারা আপনার কাছ থেকে সেবা নিচ্ছে তারা আপনার কাজে সন্তুষ্ট এ জাতীয় মতামত।
আপনার সম্পর্কে এতো কিছু জানার পর যে কেউই আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাওয়াটাই স্বাভাবিক। আপনার ফোন নং, ই-মেইল ইত্যাদি এমন স্থানে দিন যেন তা সহজে সবার নজর কাড়ে। আপনি অবশ্যই প্রতিদিন আপনার ই-মেইল চেক করবেন এবং প্রতিটি ই-মেইল এর রিপ্লাই দিবেন। এতে সবার সাথে আপনার একটা সুসম্পর্ক তৈরি হবে এবং আপনি আপনার দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবেন। এছাড়া আপনার সাইটে ব্লগের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। যেহেতু, আপনি একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করবেন সেহেতু অবশ্যই আপনার ডোমেইন ও হোস্টিং প্রয়োজন। আমার মতে, ডোমেইনের ক্ষেত্রে আপনার কাজের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ একটি নাম বাছাই করে .com ডোমেইন নিন। কারণ, যদি ভবিষ্যতে যদি বৃহৎ পরিসরে কাজ করার সুযোগ হয় তাহলে আপনার এই ডোমেইন টি একটি ব্যান্ড হিসেবে কাজ করবে। ১০০০ টাকার মধ্যেই আপনি প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করতে পারবেন। তবে একটা কথা না বললেই নয়, সেটি হচ্ছে নতুনদের মধ্যে অনেকেই ডোমেইন এবং হোস্টিং এর ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু আপনারা এ ব্যাপারে যারা অভিজ্ঞ তাদের সাথে আলোচনা করে কিনতে পারেন।
পরিশেষেঃ
আপনি যদি পুরো আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন পোর্টফলিও ওয়েবসাইট এর প্রয়োজনীয়তা কেন এতটা জরুরি। তাই,
আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনার জন্য উপযোগী পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটটি বেছে নিন। এছাড়া, YappoBD থেকে আপনার পছন্দসই পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট টি নিশ্চিন্ত মনে ক্রয় করতে পারেন এবং আপনার ভবিষ্যত কাজের সম্ভাবনাকে জাগ্রত করে তুলতে পারেন। যেকোনো ধরনের ডিজিটাল সেবায় ইয়াপ্পোবিডি ওয়েবসাইট সর্বদা পাশে আছে আপনার! তাই আজই যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।