আমরা অনেকেই ব্লগিং শুরু করার সময় ওয়ার্ডপ্রেস নাকি ব্লগার এ সম্পর্কিত বিভিন্ন কনফিউশনে ভুগে থাকি। প্রয়োজনীয় গাইডলাইন এবং পরামর্শের অভাবে অনেকেই বুঝতে পারেন না ব্লগিং এর জন্য কোনটি সঠিক। আজ আমি এই আর্টিকেলে পুরো ব্যাপারটি ক্লিয়ার করার চেষ্টা করবো। যাতে একজন নিউবি ব্লগার খুব সহজেই বুঝে উঠতে পারে কোন সেক্টরটি তার জন্য পারফেক্ট এবং কি কারণে পারফেক্ট!
তার আগে চলুন জেনে নিই ব্লগার এবং ওযার্ডপ্রেস কি এবং কিভাবে কাজ করে! আমি আগেই বলেছিলাম! একেবারে নিউবিদের জন্যেও যেনো পুরো ব্যাপারটি ইজি হয় সেভাবেই এই আর্টিকেল সাজানো হবে! সুতরাং একেবারে গোড়া থেকেই শুরু করা যাক! আশা করি আপনারা সাথেই থাকবেন।
ওয়ার্ডপ্রেস কি?
ওয়ার্ডপ্রেস হলো এমন একটি ব্লগ পাব্লিশিং সফটওয়্যার যেটি বর্তমানে প্রতি ১০০ টি ওয়েবসাইটের প্রায় ৪৫ টি ওয়েবসাইটকেই দখল করে রেখেছে। এটি একটি সিএমএস সিস্টেম প্ল্যাটফর্ম। যেটি ব্যবহার করে সহজেই প্রফেশনাল একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলা যায়। অনেক বড় বড় ব্লগাররা বর্তমানে এই ওয়ার্ডপ্রেসকে পুঁজি করে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা ইজিলি জেনারেট করতে পারছে।
ব্লগার কি?
ব্লগার বা ব্লগস্পট হলো সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের একটি ফ্রি ব্লগিং প্লাটফর্ম। এর মালিক গুগল হওয়ায় এটি ব্লগার ব্যবহারকারীকে সুযোগ-সুবিধা কিছুটা বাড়তি দেওয়ার চেষ্টা করে সবসময়। একজন ব্লগার সম্পূর্ণ ফ্রিতে খুব সহজে নিজের ব্লগটি সুন্দরভাবে তৈরি করতে পারতে এখানে৷ আপনি ব্লগ ডিজাইনে ব্লগস্পট থেকে মোটামুটি স্বাধীনতা পাবেন, এমনকি নিজের মতো করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিতে পারবেন। এতো কোনো প্রকার জটিলতার সৃষ্টি হবে না।
আশা করি নিউবিরা বুঝতে পেরেছেন ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেস কি এবং এর মডেল কোনটি! এবার চলুন ওয়ার্ডপ্রেস নাকি ব্লগার কোনটি সবচেয়ে বেশি পারফেক্ট সেটি জানার জন্য এবার আমরা এই দুইটি প্ল্যাটফর্মের খরচ জেনে নিই।
WordPress ওয়েবসাইট তৈরির খরচ কত?
যাদের মনে, একটি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরি করতে কত খরচ হয় সে-সম্পর্কে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের জন্যই আজকের এই পর্ব! ব্লগার প্ল্যাটফর্ম ফ্রি হলেও ওয়ার্ডপ্রেস কিন্তু ফ্রি হয়! এটিতে হোস্টিং খরচ দেওয়া ছাড়া ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় না! যদিও একটি ওয়েবসাইটের খরচ সম্পূর্ণরূপে আপনার বাজেট এবং সেই ওয়েবসাইট তৈরির উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে।
একটি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরিতে যে যে সেক্টর টাকা লাগতে পারে সেগুলি হলোঃ-
হোস্টিংঃ
একটি স্ব -হোস্টেড ওয়ার্ডপ্রেস সাইট তৈরি করতে আপনাকে বিভিন্ন হোস্টিং প্ল্যান যেকোনো একটি বাছাই করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুসারে এবং আপনার বাজেটের সাথে মানানসই এমন হোস্টিং বাছাই করে নিতে হবে৷ এর মূল্য হোস্টিং প্ল্যান অনুসারে প্রায় ৫০০/- থেকে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে অথবা আপনি চাইলে কাস্টম ভাবে তৈরী করে নিতে পারেন আপনার চাহিদা অনুযায়ী৷ তবে সব কিছুই নির্ভর করবে আপনার বাজেটের উপর।
ডোমেইনঃ
ডোমেইন হলো আপনার ওয়েবসাইটের রেজিষ্ট্রেশন করা নাম। যেটি আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে সাহায্য করবে৷ একটি ডট কম ডোমেইন নাম সাধারণত সর্বনিম্ন ৬০০/৭০০ থেকে শুরু হয় যা বাৎসরিক হিসাবে দেয়া হয়।। সুতরাং এটিও আপনার বাজেটের সাথে এড করে নিতে হবে।
থিমঃ
একটি ভালোমানের ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের পেছনে একটি ভালোমানের থিমের ভুমিকা রয়েছে৷ বর্তমান বাজারে সেরা থিমগুলির দাম ৫০$ থেকে শুরু করে ২০০$ হতে পারে৷ তবে আপনি চাইলে ফ্রি থিম ও ব্যবহার করতে পারেন। এ ব্যপারে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস থিম কি? ফ্রি এবং পেইড থিমের মধ্যে পার্থক্য ও সুবিধা/অসুবিধা ? এই ব্লগটি দেখে নিতে পারেন।
প্লাগিনঃ
এটি আপনার ব্যবহারের উপর নির্ভর করছে।
সুতরাং সবশেষে বলা যায় একটি ওযার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরিতে মোটামুটি আপনাকে বছরে ৪০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা হাতে নিয়েই নামতে হবে। এবার আসুন ব্লগার বা ব্লগস্পট নিয়ে।
ব্লগার ওয়েবসাইট তৈরির খরচ কত?
আগে বলেছি একটি পুরোপুরি ফ্রি প্ল্যাটফর্ম। তবুও ভালো মানের একটি ব্লগার ওয়েবসাইট তৈরি করতে চাইলে আপনাকে কিছু টাকা অবশ্যই ইনভেস্ট করতে হবে।
যে যে সেক্টরে ইনভেস্ট করতে হবে সেগুলি হলোঃ-
ডোমেইনঃ
ব্লগারে একটি প্রিমিয়াম ডোমেইন খুবই ভ্যালু বাড়ানোর কাজে উস্তাদ। একটি ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। যদিও এটি বাংলাদেশী কোম্পানির বেলায়!
থিমঃ
ব্লগারের জন্য একটি প্রিমিয়াম থিম কিনতে গেলে আপনাকে ৫০০০ থেকে ৬০০০ হাজার টাকা গুনতে হবে। থিম কাস্টমাইজেশন করার সময় অবশ্যই প্রয়োজনী তথ্য দিয়ে পরিপূর্ণ থিম কাস্টমাইজেশন করিয়ে নিতে সার্ভিস ফি দিতে হবে।
ব্লগারে ওয়ার্ডপ্রেসের মতো অতো খরচ নেই বললেই চলে! তবে কোনটি বেস্ট সেটি সম্পর্কে জানতে আপনাকে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকতেই হবে।
খচরের ব্যাপারে তো জানা গেলো। চলুন এবার এই দুই সেক্টরের মালিকানা ও স্বাধীনতা, জটিলতা, ডিজাইন, এসইও, নিরাপত্তা, কন্ট্রোল, মালিকানা ও স্বাধীনতা, জটিলতা, ডিজাইন, এসইও, নিরাপত্তা, কন্ট্রোল ইত্যাদি দিয়ে আলোচনা করা যাক!
মালিকানা ও স্বাধীনতাঃ
ওযার্ডপ্রেস মূলত , ম্যাট মোল্যেনওয়েগ এবং মাইক লিটলের মালিকানায় রয়েছে। তারাই মূলত প্রথম ওয়ার্ডপ্রেস তৈরি করেন। আগেই বলেছি ওযার্ডপ্রেস ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। সুতরাং এটি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা মেনে চলে৷ যে কেউ এটির মাধ্যমে ওয়েবসাইট তৈরি করে ইনকাম জেনারেট করতে পারে।
অন্যদিকে ব্লগার বা ব্লগস্পটে আপনি শুধুমাত্র একজন ব্লগ প্রকাশক হলেও এর সম্পূর্ণ মালিকানা ও কর্তত্ব গুগল বহন করে। এটি ব্যবহারকারীর জন্য মূলত ফ্রি ব্লগিং সার্ভিস৷
জটিলতাঃ
ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা তৈরি ব্লগ সাইটে তাদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিজ্ঞাপন শো করার ফলে বিজ্ঞাপনগুলি সরাতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে টাকা পরিশোধ করতে হবে। নিজের পছন্দমতো বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে আপনাকে সাইটে প্রতি মাসে ২৫,০০০ এর বেশী Page View আনতে হবে। বিভিন্ন থিম, হোস্টিং ইত্যাদির জন্য কোন প্রকার Spamming বা Virus এর অ্যাটাক থেকে সাইট রক্ষা মোটামুটি কঠিনই হবে বলা চলে!
ডিজাইনঃ
ওয়ার্ডপ্রেসে নিজের ইচ্ছেমতো ডিজাইন করার সুযোগ রয়েছে। পছন্দ মতো থিম কিনে বা চয়েজ করে ইনস্টল করার পরবর্তী ধাপে নিজের মতো করে খুব সহজেই কাস্টমাইজেশন করে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে নিজে না পারলে এক্সপার্টের সাহায্য নিয়ে মনমতো ডিজাইন করা যেতে পারে৷
ব্লগারে ডিজাইন মোটামুটি করা যায় বলতে গেলে! থিমভিত্তিক ডিজাইনের অবস্থা ভালো হলে ব্লগারে কিন্তু সামান্য এইচটিএমএল ও সিএসএস জ্ঞানেরও দরকার পড়ে। আপনি সাইডবার, হেডার বা ফুটারে ব্যবহার করে টুকটাক ডিজাইন এডিট করতে পারলেও পুরোপুরি কাস্টমাইজড ডিজাইন রেডি করতে তো পারবেনই না! উল্টো পেইন পাবেন!
এসইওঃ
ওয়ার্ডপ্রেস এর অভ্যন্তরে কোড অত্যন্ত সাজানো এবং সাধারণ হওয়ায় এসইও করা খুব সহজ। গুগল এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনরা ওয়ার্ডপ্রেস পছন্দ করার মূল কারণ হলো ওয়ার্ডপ্রেস নিজেই সার্চ ইঞ্জিনের জন্য সাজানোর কাজ ৮০-৯০% করে রাখে!
ব্লগারে অ্যাডভান্স লেভেলের এসইও সম্ভব না হলেও এটি গুগল এডসেন্স সাপোর্টিভ। এদিক দিয়ে বেশ এগিয়ে আছে ব্লগার৷ তবে এটি যে ডিফল্টভাবেই এসইও ফ্রেন্ডলি তা বলার অপেক্ষা রাখে না এবং এই সেক্টরে ইমেইজ এসইও করা খুব সহজ।
নিরাপত্তাঃ
নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে, নিরাপত্তার হালনাগাদ গুলোকে বিবেচনা করে ওয়ার্ডপ্রেস তৈরি করা হয়েছে। ফলে যেকোনো ধরণের ওয়েবসাইটে ব্যবহারের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস পুরোপুরি নিরাপদ এবং ঝুঁকিহীন। ওয়ার্ডপ্রেসে মেয়াদউত্তীর্ণ এবং ভয়ংকর কোড নজরদারিতে থাকতে হয় বিভিন্ন প্লাগিন এবং থিমকে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের এবং হোস্টিং প্রতিষ্ঠানের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গ্রাহকের ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকে নিরাপদ রাখে কতৃপক্ষ।
ওয়ার্ডপ্রেসের মতো ব্লগারের সিকিউরিটিও বেশ পাকাপোক্ত। কেননা এর সিকিউরিটির দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে গুগলের ওপর থাকে। যদি ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত কোন দূর্বলতা না থাকে তবে ব্লগসাইট হ্যাক করা অসম্ভব বলে আমি মনে করি৷
কন্ট্রোলঃ
ওয়ার্ডপ্রেস কন্ট্রোল করার ক্ষেত্রে আপনাকে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হবে না। কারণ এটি খুব সহজেই কন্ট্রোল করা যায়। পাশাপাশি একাধিক একাউন্টও একসাথে কন্ট্রোল করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে একটি বিশেষ প্লাগিনের সাহায্য নিতে হবে।
ব্লগার মূলত ইউজারদের সীমিত আকারে কন্ট্রোলিংয়ের সুযোগ দিয়ে থাকে। অর্থ্যাৎ ব্লগারে আপনার নিয়ন্ত্রণ সীমিত বলেই আপনি এখানে নিজের ইচ্ছেমতো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পোস্ট, পেজ বা ক্যাটাগরি ইউআরএল স্ট্রাকচার নির্ধারণের ক্ষমতা থাকে ব্লগার কতৃপক্ষের হাতে।
ওয়ার্ডপ্রেস নাকি ব্লগার কোনটি ভালো?
এই প্রশ্নের উত্তরটি নিজে নিজের বোঝার সুবিধার্থেই আমি উপরে ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। ফিউচার প্রফেশনাল ব্লাগরদের জন্য আমি বলবো ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে শুরু করার জন্য। কিছুটা খরচের প্রশ্ন থাকলেও এটি দীর্ঘমেয়াদি সুফল দিবে আপনাকে। মনে রাখবেন, ব্লগারে একটু বেশি ভিজিটর আসলেই আপনাকে হোস্টিং কিনেে অবশ্যই ওয়ার্ডপ্রেসে যেতে হবে। সুতরাং আগেভাগেই ব্যবস্থা করা ভালো!
শেষ কথাঃ
আশা করি নিজের মনের প্রশ্নগুলির উত্তর আজকের এই আর্টিকেলে খুঁজে পেয়েছেন যে ওয়ার্ডপ্রেস নাকি ব্লগার দিয়ে আপনার ওয়েবসাইট তৈরী করবেন। তবে আর দেরি কেনো! আজই গুগলকে পুঁজি করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিয়ে নিন। আপনাদের মনে যদি কখনো মনে হয় আমি নিজে তো ওয়েবসাইট এর কিছুই বুঝিনা বা পারিনা তাহলে আমি কি ভাবে ওয়েবসাইট সাজবো? তবে চিন্তার কারন নেই, আমরা ইয়াপ্পোবিডি খুবই সীমিত মূল্যে আপনাকে একটি সুন্দর ওয়েবসাইট তৈরী করে দিতে সাহায্য করবো । আমাদের রয়েছে দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার যারা আপনার প্রয়োজন বুঝে সুন্দর ভাবে আপনার ওয়েবসাইট তৈরী করে দিবে । তাই আজই যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।