পণ্য বিক্রি করতে যেমন দোকান লাগে, ই-কমার্স বিজনেস ও ঠিক তেমন একটি দোকান। একটি ই-কমার্স সাইট এখানে অনলাই দোকান হিসেবে কাজ করে। তাই ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে প্রথমেই পন্য বেচাকেনার জন্য একটা ওয়েবসাইট বানাতে হবে। এখন কথা হচ্ছে একজন নতুন উদ্যোক্তা কিভাবে তার বিজনেস এর জন্য একটি ই কমার্স সাইট বানাবে? চিন্তার কারন নেই, বর্তমানে অনলাইনে রেডিমেড ইকমার্স ওয়েবসাইট এর ছড়াছড়ি। ৫/৭ হাজার টাকায় একটা রেডি ইকমার্স ওয়েবসাইট পেয়ে যাবেন সহজেই।
ইদানিং লক্ষ্য করলে দেখবেন যে ব্যাঙের ছাতার মত কিছু ফেসবুক বিজনেস পেইজ গজিয়ে উঠেছে। তারা নামমাত্র মুল্যে বলতে পারেন একদম মাগনাই ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে দেওয়ার অফার দিচ্ছে। তারা ডোমেইন,হোস্টিং সব দিচ্ছে এই অফার এর মধ্যে। এমনকি আপনার ওয়েবসাইট গুগোল এর প্রথম পেইজে এনে দেওয়ার কথা বলছেন তারা।
তবে এখানে আমরা অন্যদের থেকে একটু আলাদা। অন্য সবার মতো আমরা এতকিছু করে দেওয়ার আষাঢ়ে গল্প শোনাবো না। আমরা আপনাদের জন্য যেটুকু করতে পারি তা হলো, এই বাজেটে আমরা আপনকে একটা প্রশনাল মানের রেডি ই-কমার্স ওয়েবসাইট দেওয়ার প্রতিজ্ঞা।
রেডিমেড ই-কমার্স ওয়েবসাইটঃ
তবে ৫\৭ হাজার টাকায় একটা রেডি ইকমার্স ওয়েবসাইট দিচ্ছেন যারা(সাথে ডোমেইন হোস্টিং এবং আরো অনেক কিছু)। কিভাবে সম্ভব ভাই?
এত বিজ্ঞাপন দেখে হয়তো আপনি চিন্তায় পড়ে যান যে কোন অফার টা লুফে নিবেন। তাইতো? আচ্ছা তাহলে রেডিমেড ই-কমার্স ওয়েবসাইট কেনার আগে যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে,সেসব নিয়ে আজকের পর্বে কথা হবে।
রেডিমেড ওয়েবসাইট কি? রেডি ওয়েবসাইট এর সুবিধা কি?
কিভাবে বুঝবেন যে আপনার বিজনেসের জন্য ই-কমার্স ওয়েবসাইটের প্রয়োজন কিনা?
আচ্ছা যেকোন বিজনেস এর জন্যই কি একটা ইকমার্স ওয়েবসাইট দরকার? আসলে আপনার আগে বুঝতে হবে আপনার বিজনেস এর জন্য একটা ইকমার্স ওয়েবসাইট কেমন ভূমিকা পালন করবে। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে মানুষ তার দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে নির্ভর করছে প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর। কেউ ঘরে বসে এক ক্লিক এর মাধ্যমে যদি পণ্য পেয়ে যায় তাহলে অবশ্যই অনলাইন কেনাকাটার দিকে ঝুকবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রথমে দেখবেন বাজারে আপনার প্রতিদন্ধীর কোন ই-কমার্স ওয়েবসাইট আছে কিনা। তারপর দেখতে হবে আপনার টার্গেটেড কাস্টমার অন্যদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি কেনাকাটা করতে সক্ষম কিনা।
কারন আপনার টার্গেটেড কাস্টমার যদি অনলাইন কেনাকাটা তে অভ্যস্ত না হয় তাহলে আপনি ইকমার্স শুরু করে ভালো কিছু করতে পারবেন না। ই-কমার্স একটি স্মার্ট ব্যবসা সে ব্যপারে সন্দেহ নেই। তবে এখানে উন্নত গ্রাহক সেবা, গ্রাহক সন্তুষ্টি সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে ব্যবসায় সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়।
যদি আপনার পণ্য অনলাইনে বিক্রয়যোগ্য বলে মনে হয় কেবলমাত্র তখনই নির্দিষ্ট কোন একটি ওয়েবসাইটে সেই পণ্যটির বিবরণ সহ ছবি বা ভিডিও দেখানোর মাধ্যমে পণ্যটি বিক্রয় করতে পারবেন।
যদি মনে করেন আপনার কাস্টমার দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তাহলে আপনার ই কমার্স ওয়েবসাইট প্রয়োজন। তাছাড়া যদি মনে হয় আপনার টার্গেটেড কাস্টমার রাতে কেনাকাটা করতে পছন্দ করে তাহলে একটা ইকমার্স সাইট জরুরী। অবসর সময়ে বাসায় বসে আপনার পণ্য গুলো অর্ডার করতে পারবে খুব সহজেই ।
এক্ষেত্রে কাস্টমার নিজে থেকে আপনার সেল করা প্রোডাক্টগুলো সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবে । এবং তাদের পছন্দ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে। যদি আপনার বিক্রিত প্রোডাক্টগুলোর রঙ, দাম, সাইজ , ফিচারের অনেক বৈচিত্র্য হয় তখন ইকমার্স ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে খুব সহজেই সেগুলো অনলাইনে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারবেন।
যাক ধরে নিলাম, এখন আপনি একটা ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করবেন।আর আপনি রেডিমেড ওয়েবসাইট নিতে আগ্রহী। তাহলে কি কি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে আপনার?
একটি ডট কম ডোমেইনঃ
আমরা সবাই জানি, ডোমেইন নাম বলতে কোন একটা ওয়েবসাইটের পরিচয়/নামকে বোঝায়। সহজ ভাবে বললে, ডোমেইন হচ্ছে ওয়েবসাইটের এ্যাড্রেস বা ঠিকানা যেটি মানুষ ব্রাউজারে টাইপ করে ওয়েব সাইট ভিজিট করতে পারবে। ডোমেইন হলো ওয়েবসাইটের নাম, এই যেমন ধরুন, google.com, alibaba.com, daraz.com.bd ইত্যাদি।
সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর যেমন নাম রাখা খুবই জরুরী ঠিক তেমনি আপনার ব্যবসায়ের ডোমেইন নেইম ঠিক করা ততখানিই জরুরী। কারণ যতদিন আপনার ব্যবসা থাকবে এই ডোমেইন নেইম ও থাকবে। আপনি জানেন নিশ্চয় অনেক ধরনের ডোমেইন এক্সটেনশন আছে যেমন, ( .com .net .org .xyz ) ইত্যাদি।
সবসময় মনে রাখবেন বিজনেস এর জন্য ডট কম ডোমেইন বেস্ট চয়েজ।নাম যত ছোট নেওয়া যায়, তত ভালো। এতে আপনার সাইট যারা দেখবেন, তাদের নামটা মনে রাখা সহজ হবে। তাই কারো কাছ থেকে একটা নতুন সাইট কেনার আগে এই বিষয় টি খেয়াল রাখবেন। ডোমেইনের সম্পূর্ণ কন্ট্রোল আপনাকে দিবে কিনা সেটা খেয়াল রাখবেন।
তাহলে একটা ডোমেইন নেইম এর দাম কেমন? সাধারণত ডোমেইন নিবন্ধন করা যায় ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকার মধ্যে। ডোমেইন এক বা দুই বছরের জন্য নিবন্ধন করা যায়।
ই-কমার্স সাইটের উপযোগী হোস্টিংঃ
হোস্টিং হলো আপনি যে সাইটটা তৈরি করবেন সেইটার যাবতীয় ডেটা, তথ্য, ফাইল ও দরকারি জিনিসপত্র রাখার জায়গা। এই হোস্টিং এর আবার প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন: ডেডিকেটেড হোস্টিং, শেয়ার হোস্টিং, ক্লাউড হোস্টিং ইত্যাদি।
আপনি ভাবছেন আপনার জন্য কোনটা বেস্ট। তাইতো? আচ্ছা বলছি। বর্তমানে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান বাজে হোস্টিং দিয়ে রেডি ওয়েবসাইট বিক্রি করে দেয়। কিন্তু যদি আপনার বিজনেস ভবিষ্যতে আরো বড় করার চিন্তা ভাবনা থাকে তাহলে অবশ্যই ডেডিকেটেড হোস্টিং এর কথা ভাবুন। যাতে করে পরবর্তীতে নতুন করে কোন সমস্যায় পড়তে না হয়।
একটা কম্পিউটারের পুরোটাকেই যখন সার্ভার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন একে ডেডিকেটেড সার্ভার বলা হয়। ডেডিকেটেড সার্ভারের হোস্টিং হলো ডেডিকেটেড হোস্টিং। কতটুকু জায়গা ও ব্যান্ডউইথ এবং ভবিষ্যতে আপগ্রেড করা যাবে কিনা? ব্রান্ড ইমেইল সুবিধা আছে কিনা? সম্পূর্ণ সিপ্যানেল অ্যাক্সেস আছে কিনা? এসব বিষয় খেয়াল রাখবেন।
ইকমার্স ওয়েবসাইট থিমঃ
কোন ওয়েবসাইট কেনার আগে তার থিম সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। আপনি যাদের কাছে থেকে সার্ভিস নিচ্ছেন তারা অনেক সময় একটা ফ্রী থিম দিয়ে আপনার সাইট বানিয়ে দিতে পারে। আসলে এতে কিছুদিন পর ওয়েবসাইট এর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
জিজ্ঞাসা করে নিবেন যে সে ফ্রি থিম দিয়ে সাইট তৈরি করে দিবে নাকি পেইড। যদি পেইড থিম হয় তাহলে, কোথা থেকে কিনবে সেটা জেনে নিবেন। অলরেডি তৈরি করা থাকলে সেটি সম্পর্কে খোজ নিবেন। নাল থিম দিয়ে সাইট বানালে ভবিষ্যতে সাইট ডাউন হয়ে যেতে পারে,যেকোনো সময় সাইট হ্যাক হয়ে যেতে পারে কিংবা অযথা অ্যাডও দেখাতে পারে।
এসইও ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইটঃ
ওয়েবসাইট যতো সুন্দর হোক নাহ কেন, এসইও ফ্রেন্ডলি না হলে আপনার পক্ষে অনেক কষ্ট হয়ে যাবে সেই ওয়েবসাইট এর র্যাংক বাড়ানো। তাই রেডি ওয়েবসাইট কেনার সময় অবশ্যই এসইও এর বিষয়ে গুরুত্ব দিবেন। গুগল সার্চ ইঞ্জিনে যুক্ত করে দেয়া ও বেসিক এসইওগুলো করে দিবে কিনা জেনে নিবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার জেনে রাখা ভালো এসইও এর জন্য আলাদা কিছু চার্জ প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
লাইভ চ্যাট অপশনঃ
ইকমার্স এ লাইভ চ্যাট খুবই জরুরি। কাস্টমারদের সাথে যদি সরাসরি ওয়েবসাইট এ কথা বলতে পারেন তাহলে আপনার বিজনেস এর একটা ভালো ইম্প্রেশন হবে। তাই আপানাকে লাইভ চ্যাট অপশন যুক্ত করে দিবে কিনা জেনে নিবেন।
পেমেন্ট মেথড (বিকাশ,রকেট, নগদ)
সাইট তৈরির-পর গ্রাহক পেমেন্ট কিভাবে করবে, সেই ব্যবস্থা করাটা জরুরি। আপনি চাইলে ক্যাশঅন ডেলিভারির ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়া, ডিজিটাল পেমেন্টের পদ্ধতিও রাখতে পারেন। ইকমার্স ওয়েবসাইটে পেমেন্ট মেথড যুক্ত করা আছে কিনা দেখে নিবেন। আপনি চাইলে, পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তবে নতুন ই-কমার্সের ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে গেটওয়ে না কিনলেও চলবে।
পরিশেষেঃ
ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি নিয়ে এই ছিল আজকে সংক্ষিপ্ত লেখা। আশা করি আপনি এখন বুঝে গেছেন রেডি ই-কমার্স ওয়েবসাইট কেনার আগে কি কি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। আশা করি লেখাটি আপনাদের উপকারে এসেছে। তাই দামে কম মানে ভালো লেখা দেখেই ঝাপিয়ে পড়বেন না। আপনার স্বপ্নের বিজনেস এর জন্য ওয়েবসাইট কেনার আগে এই বিষয় গুলো ভালোভাবে দেখে নিবেন।