You are currently viewing ই-কমার্স ব্যবসায় ইমোশনাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কিভাবে কাজ করে?

ই-কমার্স ব্যবসায় ইমোশনাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কিভাবে কাজ করে?

ইমোশন বলতে সাধারণত আমরা আবেগকে বুঝিয়ে থাকি। আপনি জানেন কি ইমোশন দিয়েও আজকাল মার্কেটিং হয়? এই তো! দুই দশক আগের কথা! একটি দেশি সাবানের কোম্পানি মানুষের ইমোশনকে পুঁজি করে বাঘা বাঘা সব সাবানের কোম্পানিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। পরবর্তীতে কোম্পানিটির সাবান বাজারের সর্বাধিক বিক্রিত সাবানে পরিণত হয়। এখন হয়তো ভাবছেন, এটি কিভাবে সম্ভব? এর সোজাসাপ্টা উত্তর হলো ‘ইমোশনাল মার্কেটিংয়ের জাদু’তেই এটি সম্ভব। 

ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ, সিপাহি বিদ্রোহের কথা মনে আছে তো? ১৮৫৭ আগে থেকেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সামরিক নানা কারণে দেশি সিপাহিদের মন প্রচন্ড ক্ষেপে থাকার কারণে সেই ক্ষোভের আগুনে তেল ঢেলে দিল এনফিল্ড নামক এক রাইফেল। যেটিতে কিনা কার্তুজ ব্যবহার করা হতো। ব্যবহার করা উদ্দেশ্যে তার খোলসটি দাতে কেটে রাইফেলে ভরা লাগতো। পরবর্তী রটে যায় ওই কার্তুজে গরু ও শুয়োরের চর্বি মেশানো আছে। যা শুনে পরবর্তীতে শুনে মুসলিম ও হিন্দু সিপাহিরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। 

তেমনই ভাবে সাবান তৈরিতে পশুর চর্বি ব্যবহৃত হয়, এমনটা গুজব রটেছিলো সেবার। যার সুযোগটা লুফে নেন সৈয়দ আলমগীর সাহেব। ফলে তিনি অ্যারোমেটিক বিউটি সোপ প্যাকেটের গায়ে লিখে দেন”একমাত্র শতভাগ হালাল সাবান”। পরবর্তীতে এই হালাল শব্দটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার ফলে বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও দেখা যায়”হালাল খাবার”, “হালাল মিট” ইত্যাদি নামের কোম্পানি বা পণ্য। এই পুরো প্রক্রিয়াটির পেছনে কাজ করেছে ইমোশনাল মার্কেটিং। আজ জানবো ইমোশনাল মার্কেটিং কি এবং ই-কমার্স ব্যবসায় ইমোশনাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে। 

ইমোশনাল মার্কেটিং কি?

বাঙালী জাতি হিসেবে একটু আধটু নয় বেশ বড় ধরনের ইমোশনাল পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল আমরা। সহজে বিশ্বাস যোগ্যতার কারনে ইমোশন ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে খুব সহজে প্রভাব বিস্তার করে বলে সেটাকে একটু দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে পারলে মার্কেটিংয়ে সফলতা পাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। তবে সফলতার লোভ থাকলে এক্ষেত্রে কাজটি নির্ভুল হওয়া চাই।পাশাপাশি সাবধানতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করলে সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে সময় লাগবে না। 

সোজা কথায় ইমোশনাল মার্কেটিং হলো এমন একটি মার্কেটিং কৌশল যেটি আসলে মানুষের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে করা হয়। টার্গেটেড অডিয়েন্সের চোখে পড়া, মনে রাখার ব্যবস্থা করা, শেয়ারে উদ্বদ্ধু করা এবং সবশেষ তার থেকে গাঁটের টাকা খসিয়ে পণ্য বা সেবা গছিয়ে দেওয়ার বুদ্ধি হলো এই ইমোশনাল মার্কেটিং। তবে এর কার্যকর প্রথা হলো একবারে একটির বেশি আবেগকে ব্যবহার না করা। সুখ, দুঃখ, রাগ কিংবা ভয়ের যেকোন একটাকে একবারে কাজ লাগানো গেলেই যে কেউ এই ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করতে পারে৷ 

ইমোশনাল মার্কেটিংকে বুঝতে হলে আপনাকে বুঝতে হবে মানুষের আকর্ষণের জায়গাটা কোথায়, কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রচার করতে পারলে সর্বস্তরের মানুষ সেটাকে গ্রহন করবে। তবে চিন্তা করতে হবে ইমোশনাল মার্কেটিং করতে গিয়ে এমন কিছুই করা যাবে না যার ফলে হিতে বিপরীত না আবার হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, কোনো সম্প্রদায়ের ধর্ম,বর্ণ,জাত, কুল ইত্যাদি অতিরঞ্জিত কিছু নিয়ে মার্কেটিং করলে এতে ইতিবাচকের থেকে নেতিবাচক ফলাফল বেশি বয়ে আনবে।

কিভাবে ইমোশনাল মার্কেটিংকে কাজে লাগানো যায়?

ইমোশনাল মার্কেটিং যথাযথ ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে সবার আগে আমাদের এটা জানা থাকতে হবে যে, কোন প্রক্রিয়াগুলি জানা থাকলে আমরা ইমোশনাল মার্কেটিং ব্যবহার করতে পারবো। এ সম্পর্কে বেশ কিছু প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিতে সাথেই থাকুন৷ 

লিড উইথ কালারঃ

মনে রাখবেন, আপনার অডিয়েন্স কালার বা রঙের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দিতে খুবই ভালোবাসে। আপনাকে এটি মাথায় রেখেই সামনে আগাতে হবে। মাথায় রাখতে হবে বর্তমান সময়ে কোন কালারটি সকলের কাছেই অধিক গ্রহণযোগ্য। সেই অনুযায়ী আপনার ব্র্যান্ডকে ডিজাইন করতে পারলেই গ্রাহকের কাছে সহজেই পৌঁছাতে বেশ সুবিধা হবে।

অডিয়েন্স কমিউনিটিকে টার্গেটঃ

নির্দিষ্ট একটি অডিয়েন্স কমিউনিটিকে টার্গেট করার চেষ্টা করুন। মুসলিম কমিউনিটিকে কেন্দ্র করে প্রচার করতে চাচ্ছেন নাকি সনাতন সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে কাজ করতে চান..অথবা বয়স্ক শ্রেণির ব্যাক্তিদের জন্য কাজ করতে চাইছেন নাকি তরুণ সমাজকে টার্গেট করে কাজ করাার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা নিশ্চিত করুন আগে। আগে কমিউনিটি নির্দিষ্ট করুন পরবর্তী ধাপে অডিয়েন্স কমিউনিটিকে টার্গেট করার চেষ্টা করুন। 

অডিয়েন্সকে বুঝতে শিখুনঃ

টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে ধারনা নিন আগে। অর্থ্যাৎ যেই টার্গেট অডিয়েন্সকে নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন তাদের সম্পর্কে পাক্কা রিসার্চ করুন৷ ভালোভাবে জেনে নিন তাদের ইন্টারেস্ট, তাদের তাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা সম্পর্কে। ফলে আপনি সহজেই আপনি ইমোশনাল মার্কেটিং করতে পারবেন তাদের উপর।

অডিয়েন্সকে আকর্ষণীয় বর্ণনা বলুনঃ

গল্প বা স্টোরিটেলিং একটি অন্যতম মার্কেটিং পলিসি। যার মাধ্যমে অডিয়েন্সের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় সহজেই। তাই তাদেরকে তাদের চিন্তা চেতনা এবং মানসিকতার উপর ভিত্তি করে গল্প বলার চেষ্টা করুন। 

এছাও আপনি আপনার ব্যাবসার জন্য মার্কেটিং করে ব্যাবসার প্রসার ঘটাতে পারেন

মার্কেটিং

কেনো করবেন ইমোশনাল মার্কেটিং?

কর্পোরেট এবং রিটেইল মার্কেটিং উভয় ক্ষেত্রেই ইমোশনাল মার্কেটিং বেশ কার্যকর ভুমিকা পালন করে। যা ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরীর ক্ষেত্রেও একইভাবে কার্যকর। এতে সফলতা বেশি পাওয়া যায়। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো প্রতি ঈদের আগে প্রচারিত গ্রামীন ফোনের ’স্বপ্ন যাবে বাড়ী আমার’ গানের সাথে প্রচারিত বিজ্ঞাপনটি। গানের সাথে প্রচারিত বিজ্ঞাপনটিকে কখনোই ভুলে যাবার কথা নয়। কেননা এটি যে পরিমান ইমোশনাল ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরী করেছে তা অকল্পনীয়। গানটির মূল থিম ছিলো ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দের সাথে যত দূরে যান সাথে থাকুন। যা খুব সূক্ষভাবে মার্কেটিংয়ের কাজ করেছে। আপনার ইমোশনকে সঠিক প্রক্রিয়ায় কাজে লাগিয়ে ব্যবসা জমজমাট করতে জেনে নিন কেনো ইমোশনাল মার্কেটির এতোটা দরকার!

  • বর্তমানে অসংখ্য ইমোশনাল বিজ্ঞাপন শুধু মাত্র মানুষের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে মার্কেট শেয়ার দখল করে এগিয়ে চলেছে
  • ইমোশনাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতার গ্যাপ পার্টনার হওয়া যায় সহজে এবং এটি সফলতা পাওয়ার রাস্তাটাকে সহজ করে দেয়
  • ক্রেতার কাছে আপনাকে সফলতার চেয়ে পরিশ্রমী মানুষ হিসেবে পরিচিত করিয়ে দিবে
  • সত্যিকার অর্থেই আপনাকে এবং আপনার কাজকে উপস্থাপন করতে পারে
  • সেলস নিয়ে আপনাকে কখনোই চিন্তা করতে দেয় না
  • সমস্ত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় অনুভুতিকে পজিটিভলি কাজে লাগানো যায়
  • রিলেজিয়াস ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে সফল হওয়া যায়
  • মানবিক, স্পর্শকাতর ও ভালবাসার কাজে লাগালে সেলস সুনিশ্চিত 
  • আপনার প্রতি আপনার প্রতিটি ক্রেতার মনে একটি সফট কর্ণার সৃষ্টি করে এবং তা পরবর্তী খুবই এফেক্টিভ কাজ করে
  • ইতিবাচক সফলতার সাথে সেলস বাড়তে সাহায্য করে
  • ক্রেতার মনে আপনার প্রতিযোগীর পন্যের থেকে আপনার পণ্যে বেশী বিশ্বাসযোগ্যতা খুঁজে পায়
  • ক্রেতার কাছে আপনার ব্যক্তিগত সুন্দর এবং গোছানো ইমেজ তৈরি করতে সাহায্য করে

শেষ কথা

লক্ষ্য করবেন আমাদের অনেকের মনে বেশকিছু অ্যাডভার্টাইজমেন্ট আজো একটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। হতে পারে সেটি ”স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার” নামের টেলিভিশন অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কিংবা নব্বই এর দশকের থেকে টেলিভিশনের পর্দায় প্রচারিত নানান পণ্যের টিভিসি (Television Commercial)। আমরা হয়তো জানি না এসব টেলিভিশন অ্যাডভার্টাইজমেন্ট আজো কেনো আমরা মনে রেখেছি! যেখানে অন্য সকল অ্যাডভার্টাইজমেন্ট আমরা কস্মিনকালেও মনে রাখিনি। এটি সম্ভবপর হয়েছে প্রথাগত মার্কেটিং প্রক্রিয়া ব্যবহারের পাশাপাশি ইমোশনাল মার্কেটিং ব্যবহারের জাদুতে। যেটিতে লক্ষ্যনীয়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হচ্ছে ইমোশনাল মার্কেটিংয়ের মশলা৷ 

আশা করি আপনাদের মনে ইমোশনাল মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিত জানার আগ্রহ জেগে উঠাকে কিছুটা হলেও প্রাধান্য দিতে পেরেছি। কিছুটা হলেও বোঝাতে পেরেছি ইমোশনাল মার্কেটিং আসলে কি ? ইমোশনাল মার্কেটিং এর ব্যবহার কিংবা ইমোশনাল মার্কেটিং এর কার্যাবলীসহ ইমোশনাল মার্কেটিং এর অদশ্যৃ জাদকুরী ক্ষমতা সম্পর্কে। এবার সিদ্ধান্ত নেবার পালা আপনার। ততদিনে ভালো থাকুন।

Facebook Comment