You are currently viewing কোভিড কীভাবে আমাদের ব্যবসায় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে?

কোভিড কীভাবে আমাদের ব্যবসায় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে?

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমদের ক্রমশই মুনাফার পিছনে ছুঁটে চলার যাত্রা শুরু হয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই। মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি আমাদের যে পরিবেশের বেশ ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে ভাবছি না একটিবারও। যার ফলে লাভ-ক্ষতির ব্যালেন্স শিটে আজকাল জায়গা পাচ্ছে কোভিডের মতো ভয়াবহ ভাইরাসেরা। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই ভাইরাস প্রায় প্রতিটি শিল্পের/ব্যবসায় দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রসহ সমাজের প্রতিটি স্তর এটি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলি কঠোরভাবে পালন করার চেষ্টা চলছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নাটকীয় অবনতি ঘটে যাওয়ার কারণে বলাই যায়, কোভিড-১৯ সঙ্কট আমাদের পুরো ভবিষ্যতকে নতুন আকার দিয়েছে। চলুন এই সংকটে ব্যবসা জগতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। 

ডিজিটাল রূপান্তরঃ

ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক বর্তমানে বাড়ির পাশের দোকানটিতেও মানুষ যাতায়াত করতে গেলে ভয়ে চুপসে যায়। বাড়িতে থাকার কঠোর আদেশের সাথে, ব্যবসাগুলিকে দূরবর্তী কাজের সংস্কৃতিতে পরবর্তিত হতে বাধ্য করেছে সময়। এমন পরিস্থিতিতে কি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে? মানুষের যাবতীয় চাহিদা মিটে যাবে এক নিমিষে? কখনোই না। বরং বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে মানুষের চাহিদা দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। সচেতন জনগণ হুঁমড়ি খেয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী কিনছে৷ পাশাপাশি অন্যান্য চাহিদা তো রয়েছেই। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভুমিকা পালন করছে প্রতিটি ব্যবসার ডিজিটাল রূপান্তর। অর্থ্যাৎ ই-কমার্সে রূপান্তর। 

দৃষ্টিকোণ পরিবর্তনঃ

অফলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে কাজ শুরু করা থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া চলে বর্তমান অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে হুবহু তা ঘটে না। অনলাইন ব্যবসায় অফলাইনের মতো কাজ জমা দেওয়ার ঝামেলা নেই, লিডারের ঝাড়ি খেয়ে মন খারাপের সুযোগ নেই, ঘরে বসেই কাজ করার সুযোগ থাকছে। যিনি নেতৃত্বে থাকেন তিনি জুম মিটিং কিংবা ফোনকলের মাধ্যমেই কর্মচারীদের কাজের তদারকি করে থাকেন। ফলে বিরাট একটি দূর্ভোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে ব্যবসায়ী এবং কর্মকর্তা উভয়ই। 

করোনাকালে কেনো বাড়ছে ই-কমার্সের চাহিদা?

একটু খেয়াল করলে দেখবেন এই করোনা মহামারির ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিমাণ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে৷ এই কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যভেদে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। সময়টা খারাপ যাওয়ায় যেখানে অনেক ব্যবসা, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে ই-কমার্সের অনেক প্রতিষ্ঠান অতীতের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পণ্য ডেলিভারি দিয়েছে। যা ৫০ হাজার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে৷ 

করোনাকালীন ক্রেতাদের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বেশ লাভবান হচ্ছে। এই কয়েক বছরেই প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বহুগুণ বেড়ে গেছে। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তারা গ্রাহকদের জন্য মানসম্মত, উন্নত এবং দ্রুত সেবা নিশ্চিত করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। এইতো! কদিন আগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিত্যপণ্য ই-কমার্সের মাধ্যমে বিক্রি সচল রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল। এর মাঝেই অভুতপূর্ব সাফল্য দেখে বেশ অবাক হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অনলাইনে নিরাপদে পণ্য ও সেবা সচল রাখার ব্যাপারে বেশ বদ্ধপরিকর ভুমিকা পালন করায় প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছে। ফলস্বরূপ ব্যবসার প্রবৃদ্ধিও ঘটেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

তবে একথা ঠিক যে, বেশ কিছু সমস্যা এখন সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। যদিও অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার নানা দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এর মাঝে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হলো, বেশকিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের নানাভাবে ঠকাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না করার মতো ঘৃণ্য কাজ করছে। প্রতারণার স্বীকার হয়ে অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করা থেকে বিরত থাকতে চাইছে। বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা ও মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে ই-কমার্স ব্যবসা আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে ইতিমধ্যে। এর মূল কারণ হলো ক্রেতাসাধারণের বিভিন্ন লোভনীয় অফারে এবং বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে যাওয়া। অনেকেই প্রিঅর্ডারের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও আতংকে আছেন। এর কারণে দেশের অন্যন্য ই-কমার্স সাইটগুলি বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিতে হিমশিম খাচ্ছে। 

অনলাইন ব্যবসা করতে গেলে কি কি লাগবে?

 উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি কি ভাবছেন? বুঝতে পারছেন তো এই করোনাকালে অনলাইনে ব্যবসা করাটা কতটা লাভজনক? আপনিও কি অনলাইন ব্যবসার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চান? তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটি আপনার জন্যই।

চলুন জেনে নেওয়া যাক একটি আদর্শ অনলাইন ব্যবসা দাঁড় করাতে কি কি প্রয়োজন এবং কি কি মাথায় রাখা দরকারঃ-

বিশ্বাসঃ

অনলাইন ব্যবসার করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হলো, পণ্য বা সার্ভিসের কোয়ালিটির কেমন হবে? বলা চলে, অনলাইন ব্যবসা দাঁড়িয়ে আছে পুরটাই বিশ্বাস এর উপর। কেননা এটিতে সামনাসামনি ডিল করার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং একজন অনলাইন ব্যবসায়ীর বিশ্বাসের জায়গাটিকে শতভাগ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ক্রেতা যেনো সবসময় মানসম্মত পণ্য বা সার্ভিস পায় তা নিশ্চিত করা উচিত। প্রতিটি ক্রেতাই চাই সেরা পণ্য কিনতে পারার সুযোগ। কেনার সময় তারা পূর্ন আস্থা এবং বিশ্বাস রাখে যে, কিনতে চাওয়া পণ্য বা সার্ভিসটি নিশ্চয় শতভাগ মানসম্মত এবং খাঁটি হবে। গ্রাহকের এই বিশ্বাসের মূল্য একজন অনলাইন ব্যবসায়ীকে অবশ্যই দিতে হবে। এর মাধ্যমেই গড়ে উঠবে পুরো ব্যবসাটি। জনপ্রিয় হতে শুরু করবে নতুন ব্র্যান্ডটি। 

সঠিক দামঃ

আজকাল অনলাইনে কোন কিছু কিনতে গেলেই দেখা যাই যে, পণ্যের দাম অনেক বেশি। যা অনেকসময় অফলাইন মার্কেট থেকেও অতিরিক্ত হয়। এতে করে যখন ক্রেতাসাধারণ অফলাইন মার্কেটের সাথে অনলাইন মার্কেটের পণ্যের দামের মূল্যায়ণ করে তখন বেশ বড়সড় একটি ফারাক দেখা যায়। অফলাইন মার্কেটের চাইতে অনলাইন মার্কেটে প্রতিটি পণ্যের অতিরিক্ত দাম গ্রাহককে অনলাইন কেনাকেটার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী করে তুলে। ফলে অনলাইন ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রাহকের বড় একটি হারাতে বাধ্য হয়। এই জন্য প্রতিটি অনলাইন ব্যবসায়ীর উচিত সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা। নিজের লাভ এবং ক্রেতাসাধারণের সাধ্যকে মাথায় রেখে পণ্য বা সার্ভিসের দাম নির্ধারণ করাটা সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত কাজ বলে আমি মনে করি। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে অনলাইনেদাম কিছু কম দিবেন। কারণ এক্ষেত্রে আপনাদের দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, ইলেক্ট্রিসিটি বিল দিতে হচ্ছেনা। 

ডেলিভারিঃ

অনলাইন বিজনেসের সবচেয়ে বড় একটি অংশ হলো পণ্য ডেলিভারি। যেহেতু এক্ষেত্রে সরাসরি পণ্য দেয়া-নেয়ার কোনো চান্স থাকে না, সেহেতু কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি করাটাই একমাত্র পথ হিসেবে বিবেচিত হয়। এমতাবস্থায় মাঝেমধ্যে পণ্য ডেলিভারি করতে কমবেশি দেরি হয়েই যায়। যা একটি অনলাইন ব্যবসায় অনেক বড় খারাপ দিক। সুতরাং প্রতিটি অনলাইন ব্যবসায়ীকে সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার মন-মানসিকতা থাকতে হবে। ডেলিভারি দেওয়ার সময় যেনো কোনো পণ্যের ক্ষতি না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভব হলে পণ্য ডেলিভারিতে নিজস্ব ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। 

রেডি ই-কমার্স

ওয়েবসাইটঃ

ওয়েবসাইট হলো অনলাইন ব্যবসার একটি রাস্তার মতো। এটি যত স্বচ্ছ হবে ততটাই লাভের মুখ দেখা যাবে। এটি মূলত আপনার অনলাইনের উপস্থিতির প্রমানের মতো। যেখানে আপনার কোম্পানি সম্পর্কিত সব ধরনের ইনফরমেশন থাকবে। ফেসবুক অবশ্যই একটা ফ্রি প্লাটফর্ম হলেও এটিকে সবসময় মনের মতো করে সাজানো যায় না। একটি ওয়েবসাইট থাকা মানেই হচ্ছে আপনার নিজের ঘর কিংবা একটি দোকান থাকা। যেটিকে আপনি আপনার নিজের মতো করে সাজাতে পারবেন। অন্যথায় কাস্টোমারের বড় অংশ আপনি মিস করে যেতে পারেন। একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি যদি মাসে ২০টি পণ্য বিক্রয় করেন, তাহলে ১ বৎসর পর আপনার ২৪০ জন ক্রেতা হবে। এভাবে চলতে চলতে ৩-৪ বৎসর পর আপনার নিজস্ব গ্রাহকসংখ্যা ১ হাজার পার হয়ে যাবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ! 

বিঃদ্রঃ যারা এই করোনাকালীন সময়কে কাজে লাগিয়ে অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে চাচ্ছেন তাদের সকলেরই নিজস্ব কোম্পানির একটি ওয়েবসাইট খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেনেতেনো ডেভলপার বা ডিজাইনারের দ্বারা একটি ওয়েবসাইট বানানো এবং এক্সপার্ট দলের দ্বারা একটি মানসম্মত ওয়েবসাইট তৈরি করিয়ে নেওয়ার মাঝে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। এই ব্যবধানকে উপলব্ধি করতে না চাইলে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। সাইট আপনার, সেটিকে মানসম্মত এবং সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব আমাদের। 

শেষ কথাঃ

কোভিড-১৯ আমাদের ঘরবন্দী করতে পারলেও আমাদের চাহিদাকে ঘরবন্দী করতে পারেনি। উপরন্তু ব্যবসার নতুন দ্বার তৈরি করে দিয়েছে। যাকে আমরা বর্তমানে ই-কমার্স হিসেবে চিনি। করোনাকালীন সময়ে নতুন এই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আপনার মতামত এবং অভিজ্ঞতে শেয়ার করুন কমেন্টবক্সে। পাশাপাশি পরবর্তী নতুন কোনো গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচিত আর্টিকেল পেতে সাথেই থাকুন। 

 

Facebook Comment