You are currently viewing আপনার বিজনেস ব্র্যান্ডিং ভ্যালু কিভাবে বাড়াবেন ?

আপনার বিজনেস ব্র্যান্ডিং ভ্যালু কিভাবে বাড়াবেন ?

অফলাইন বা অনলাইন ব্যবসা ক্ষেত্রে খুব পরিচিত একটি শব্দ “ব্র্যান্ডিং”। আপনার প্রোডাক্টকে বাকি সবার থেকে আলাদা করে কাস্টমারদের পছন্দের শীর্ষে তুলে নিয়ে আসতে এর জুড়ি মেলা ভার। ব্র্যান্ডিং এ যেমন বড় কোম্পানি গুলো আরো হাত পা ছাড়াতে শুরু করে, তেমনি ছোট কোম্পানি গুলোরও নিজের পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তবে বাংলাদেশের প্রায় ৯৯% ছোট কোম্পানি ব্র্যান্ডিং নিয়ে তেমন চিন্তিত নয়। যা বেশ দুঃখজনক। আজ কিভাবে আপনি আপনার কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে পারবেন তা তুলে ধরছি।

 

ব্র্যান্ডিং কি?

সাধারণত “কমোডিটি উইথ আইডেন্টিটি” হলো ব্র্যান্ডিং৷ কমোডিটি হচ্ছে পণ্য। অপরদিকে আইডেন্টিটি হচ্ছে তার পরিচিতি। কাস্টমারের মনে একটি পণ্যের ইউনিক চিন্তাধারা তৈরির কৌশলই হলো ব্র্যান্ডিং। আপনার ক্রেতা বা কাস্টমার প্রতি আপনার পণ্যের মান ও সেবার প্রতিশ্রুতি হলো এই ব্র্যান্ডিংয়ের মূল উদ্দেশ্য। বর্তমান বিশ্বের চরম প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ব্র্যান্ডিংয়ের হাতে নিজের কোম্পানিকে সৌপর্দ করতে হবে। কেননা এমন সময় ব্র্যান্ডিং হতে পারে আপনার অন্যতম হাতিয়ার। এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার পণ্যের ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পারবেন। 

পাশাপাশি ব্র্যান্ড ইমেজ বজায় রাখতে পারলে যে কাউকেই সন্তুষ্ট করে আপনার নিয়মিত কাস্টমার বানাতে পারবেন খুব সহজেই। তবে এক্ষেত্রে সঠিক এবং সুপরিকল্পিত ব্র্যান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা এটি করতে পারলে পণ্য বিক্রি করাটা খুব সহজ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে কাস্টমার আপনার সেবা ও মানের প্রতি আসক্ত হয়ে যেতে বাধ্য থাকে। পাশাপাশি পারে কম বিক্রি করেও পর্যাপ্ত মুনাফা করার ব্যবস্থা করতে। 

 

ব্রান্ডিং এবং মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য কি কি ?

আমরা অনেকেই ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং দু’টোকেই পুরোপুরি এক মনে করি। তবে উভয়ই পুরোপুরি এক না হলেও একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত। আপনি চাইলে ব্র্যান্ডিংকে একটি ভিন্ন মাত্রার মার্কেটিং প্ল্যান বলতে পারেন। 

মার্কেটিং পলিসিতে সাধারণত প্রোডাক্ট কিনতে কাস্টমারকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। আমরা দিচ্ছি সেরা পণ্যটি, আমাদের পণ্য অন্য সকল পণ্যের থেকে ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি প্রমোশনাল বাক্য এক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়। যা সাধারণত তার টার্গেট কাস্টমারকে পণ্য কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করার জন্য বলে থাকে। 

অপরদিকে কোনো মানসম্মত ব্র্যান্ড কখনই এভাবে তার ব্র্যান্ডিং করবে না। এক্ষেত্রে তারা কাস্টমারকে পুশ না করে পুল করে। প্রলুব্ধ না করে তার নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার ফলে কাস্টমারই আকৃষ্ট হয়ে ব্র্যান্ড এর কাছে আসে তার পণ্য কিনতে। মনে রাখবেন, ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে কাস্টমারের কাছে গিয়ে তার পণ্য কিনতে বলতে হয় না। 

আপনি ব্র্যান্ডিং করবেন, নাকি গতানুগতিক মার্কেটিং করে পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনাকে ভেবে দেখতে হবে কোন পথটি আপনাকে পার্মানেন্ট সমাধান দিবে! এক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং হতে পারে আপনার পারফেক্ট চয়েস। তার আগে আপনাকে জানতে হবে ব্র্যান্ডিং কিভাবে করতে হবে, কি কি ব্যাপারগুলি ব্র্যান্ডিং করার জন্য প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে স্কিপ না করে পুরো আর্টিকেলটি সাথেই থাকুন। 

মার্কেটিং

ব্র্যান্ডিং এর বেশ কিছু স্পেশাল টিপস

চলুন কিভাবে সফলতার সাথে আপনার ব্যবসার জন্য ব্র্যান্ডিং বাস্তবায়ন করবেন তার উপর দশটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিইঃ-

সব কিছুর উপর আপনার লোগো ব্যবহারেই ব্র্যান্ডিং হয় নাঃ

মনে রাখবেন, সব কিছুর উপর আপনার লোগো ব্যবহারেই ব্র্যান্ডিং হয় না। দিনদিন ভবিষ্যতের কাস্টমার বা গ্রাহক রা অনেক বেশি সচেতন হবে। তাই তাদের বুদ্ধিমত্তাকে সম্মান করে সামনে আগানোর সিদ্ধান্ত নিন। আপনার কোম্পানির অ্যাম্বাসেডর করার চেষ্টা করুন এবং এর পরিবর্তে এক একটা কাস্টমার আপনার হয়ে কথা বলার সুযোগ কাজে লাগান। 

সর্বদা যখন গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেনঃ

আপনার ব্র্যান্ডিং ভ্যালু বাড়াতে সর্বদা যখন গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবেন। আপনার গর্ব হারানো কিংবা নির্বিচার হয়ে যাওয়ার ভয়কে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে করে আপনার ব্র্যান্ডিং পজিশনিং একে-অপরের সাথে মিশে যেতে পারে।দাম কমানোর চেয়ে যতটা পারা যাং দারুণ দারুণ অফার দেওয়ার চেষ্টা করুন। কেননা বিজ্ঞাপন দিয়েও যে কেউ চাইলে তার হারানো ব্র্যান্ডিং ফিরিয়ে আনতে পারে।

উদ্ভাবনী এবং সাহসী হওয়ার চেষ্টা করুনঃ

আপনার বিশ্বাসের উপর আস্থা রেখে সবসময় উদ্ভাবনী এবং সাহসী হওয়ার চেষ্টা করুন। বড় বড় ব্র্যান্ডগুলির ডিসিশন মেকাররা কঠোর থাকেন তাদের ব্র্যান্ড নিয়ে। পাশাপাশি আমলাতন্ত্রের বড় স্তর থাকায় তাদের কাস্টমারদের চাহিদার চেঞ্জ হলেও তারা নমনীয় হয় না। এমনটা না করে নিজে নিজে নিজ কোম্পানির জন্য উদ্ভাবনী এবং সাহসী ট্রিকস ফলো করুন।

বড় ব্র্যান্ড গুলোকে অনুকরণ করা বন্ধ করুনঃ

অনেককেই বড় ব্র্যান্ড গুলোকে অনুকরণ করতে দেখা যায়। নিজের স্বাতন্ত্র্যসূচক পরিচয় খুঁজে দেখার কাজে নেমে পড়ুন। অলরেডি একটি বাজার দখল করে আছে এই বড় ব্র্যান্ডগুলি। তবে তাদের কিছু কাস্টমার আছে যারা তাদের সার্ভিস কিংবা প্রডাক্ট থেকে আরো ইউনিক অথবা আরো ভাল সার্ভিস খুঁজে বেড়াচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করুন। 

কাস্টমারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কথা বলুনঃ

সবসময় টু দ্য পয়েন্টে কথা বলার চেষ্টা করুন। গ্রাহকের সাথে কখনো আকাশ-বাতাস সম্পর্কে বলতে যাবেন না। সার্ভিস বা প্রোডাক্ট নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করুন। এতে আপনার প্রতিটি কাস্টমার খুব ভালো ভাবেই বুঝবে তার কি ধরনের সেবা আপনি করতে পারবেন।

একই বার্তা পুনরাবৃত্তি করবেন নাঃ

বহুবার একই ভাবে একই বার্তা পুনরাবৃত্তি করা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে চাইলে আপনার একই বার্তাটিকে বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করতে পারেন। 

গ্রাহকদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলুনঃ

চাকচিক্য প্যাকেট কিংবা খুব বড় অফার দিয়ে কাস্টমারের এক্সপেক্টেশন হাই করা মানেই গ্রাহকদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তোলা নয়। এসব ঢাকঢোল পিটিয়ে বলেকয়ে পরে তা যদি দিতে না পারেন তবে আপনার সাথে কাস্টমারের সম্পর্ক খারাপ হবে। সুতরাং সবসময় সত্য তথ্য দিয়ে আপনি আপনার কাস্টমারের বিশ্বাস অর্জন করার চেষ্টা করুন। গ্রাহকের সাথে লং টার্ম সম্পর্কে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। 

বুঝে কাজ করুনঃ

কোন প্রডাক্ট বা সার্ভিস আপনার কোম্পানির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা সবার আগে খুঁজে বের করুন। ওই প্রোডাক্ট বা সার্ভিসই আপনাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য। তাই সেদিকে ফোকাস করুন।

ব্র্যান্ড ডেভলপকে ব্যাক্তি ভাবুনঃ

প্রত্যেকটা মানুষের যেমন ডিফারেন্ট চরিত্র, বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং উদ্দেশ্য আছে যেটা দিয়ে তাকে চেনা যায়, ঠিক তেমনি যখন ব্র্যান্ডিংয়েরও তা থাকা উচিত। আমাদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় নিজেদের উপস্থাপনায়, কিভাবে আমরা কথা বলি তার মাধ্যমে। ঠিক তেমনি যখন ব্র্যান্ড ডেভেলপ করতে যাবেন তখন এসব ব্যাপারগুলিও মাথায় রাখুন। 

আপনার ব্র্যান্ডকে সংজ্ঞায়িত করুনঃ

মার্কেট রিসার্চ করে আপনার কাস্টমার বা ক্লায়েন্ট এর চাহিদা সম্পর্কে খুব ভালো একটি ধারনা তৈরি করে নিন। এতে প্রডাক্ট বা সার্ভিস দিয়ে কিভাবে বাজারে আপনি পার্থক্য তৈরি করবেন তা ঠিক করা সহজ হয়ে যাবে। 

 

ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব কি কি?

ব্র্যান্ডিং ভালো হলে কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করা সহজ হয়। যা গ্রাহককে বারবার আপনার পণ্যের কাছেই ফিরে আসতে বাধ্য করে। ব্র্যান্ডিং আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের একটি সামাজিক মূল্য তৈরিতে সাহায্য করে। 

 

শেষ কথাঃ

মনে রাখবেন, আপনার পণ্যের জন্য একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে ব্র্যান্ডিং খুবই জরুরি। আপনাকে ব্র্যান্ডিং বজায় রাখা এবং উন্নীত করার জন্য লড়ে যেতে হবে। পাশাপাশি এই পথে সাহায্যের ক্ষেত্রে যেকোনো প্রয়োজন যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে। আর্টিকেলটি পড়ে নতুন কিছু জানতে পারলে আপনার মতামত জানান এবং শেয়ার করে সকলকে উপভোগ করার সুযোগ করে দিন। 

Facebook Comment