বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের যুগে সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট, পেইজ এবং একটি ওয়েবসাইট থাকা মানেই মার্কেটিংয়ের একটি শক্ত হাতিয়ার নিজের আয়ত্তে রাখা। কারণ এই দুইটি মাধ্যমই গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভুমিকা পালন করে। আপনি যদি অনলাইন বিজনেসে সফল হতে চান তবে আপনাকে বেশি বেশি প্রচারণার সাহায্য নিতে হবে। অফলাইনে বিভিন্ন লিফলেট, মাইকিং কিংবা ঘরে ঘরে গিয়ে যে প্রচারণার চলন ছিলো, অনলাইনে তা একেবারেই সম্ভব নয়। এই মাধ্যমটি যেহেতু ভিন্ন ধাচের সেহেতু এই মাধ্যমে ভিন্ন কোনো পন্থাকে পুঁজি করে সামনে আগাতে হবে। সেই ভিন্ন মাধ্যমগুলির মধ্যে অন্যতম দুইটি হলো প্রচারণার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইটের ব্যবহার। আজকাল প্রায় সকলেই নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় ব্যয় করছে। আরেকটু আপডেট হওয়া মানুষের দল নিয়মিত গুগল হাতড়ে বেড়াচ্ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে দোষ কি? সে-কথা মাথায় রেখে আজ আমরা হাজির হলাম সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে সাথে ওয়েবসাইট কিভাবে ম্যানেজ করবেন সে সম্পর্কিত একটি বিশদ আলোচনা নিয়ে।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমন্ট কি?
অনলাইন বিজনেসে সোশ্যাল মিডিয়াকে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে নিয়মিত সঠিকভাবে তা পরিচালনাকেই মূলত সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমন্ট বলে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে এটি কাজ করে। নিয়মিত কন্টেন্ট পোস্ট করা, ছবি আপলোড করা, গ্রাহকের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, প্রোডাক্টের বিস্তারিত তথ্য আপলোড করা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমন্টেরই অংশ। যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর পুরো কার্যক্রমটি অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে করা হয়।
ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট কি?
সহজ কথায় ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট হলো একটি ওয়েবসাইটকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার পদ্ধতি। একটি ওয়েবসাইটকে সতেজ এবং আপ-টু-ডেট রাখার জন্য যে প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে হয় সে প্রক্রিয়াকেই মূলত ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট বলে। যা ওয়েবসাইট এর মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। মনে রাখবেন, অনলাইন বিজনেসে সফল হতে সঠিকভাবে একটি ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট করাটা অত্যন্ত দরকারি কার্যক্রম।
একজন অনলাইন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার জেনে রাখা উচিত সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইট একটি কোম্পানিকে কতটা জনপ্রিয় করে তুলে। কিন্তু এর খাপছাড়া ম্যানেজমেন্ট আপনার কোম্পানিকে জনপ্রিয় করে তোলার পরিবর্তে উল্টো গ্রাহকের কাছে অস্পষ্ট চিন্তাভাবনা তুলে ধরবে। কেননা গুগল এবং অডিয়েন্স..সকলেই সুশৃঙ্খলতা পছন্দ করে। এক্ষেত্রে ভালো ম্যানেজমেন্টের অভাবে লাভের পরিবর্তে ক্ষতিটাও হতে পারে। অডিয়েন্সের কাছে বরাবরই কোম্পানিটি নতুন মনে হবে, আনপ্রফেশনাল মনে হবে, গ্রাহক এড়িয়ে চলবে। সুতরাং ভালোভাবে সোশাল মিডিয়ার পাশাপাশি ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট করতে পারলেই অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে সফল হওয়াটা বেশ সহজতর হবে৷
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করবেন?
এটি বেশ সহজ৷ একটি ছক মেনে চলে নিয়মিতভাবে যে কেউ কাজটি করে নিতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের মূল কাজ হলো প্রতিষ্ঠানের সাথে গ্রাহকদের সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি কোম্পানির অ্যাডভার্টাইজমেন্ট, কন্টেন্ট তৈরি ও ক্যাম্পেইনিং থেকে শুরু করে গ্রাহকদের যেকোনো প্রশ্নের তাৎক্ষণিক উত্তর দেয়া ও যেকোনো তথ্য দিতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। কাজটি করতে পারেন এভাবেঃ-
নিয়মিত পোস্ট করাঃ
এটি হলো গ্রাহকের কাছে সরাসরি পৌঁছানো সবচেয়ে সহজ এবং প্রথম ধাপ। সোশ্যাল মিডিয়া মূলত পোস্টের উপরই নির্ভরশীল। পাশাপাশি দিনের বড় একটি অংশে অসংখ্য নেটপ্রেমী মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুব দেয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রোডাক্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন পোস্ট আপলোড করতে পারেন। অবশ্যই তাতে কিছু শেখার বা জানার সুযোগ থাকতে হবে। অন্যথায় গ্রাহক চাইবে তা এড়িয়ে চলতে।
ইমেইজ আপলোডঃ
ইমেইজ হলো কারো দৃষ্টি আকর্ষণের সেরা হাতিয়ার৷ আমরা অনেকেই নিউজফিডে স্ক্রল করতে গিয়ে ইমেইজযুক্ত পোস্টের দিকে বেশি মনোযোগ দিই। অনেক সময় ইমেইজ ছাড়া পোস্টগুলি চোখেই পড়ে না। এক্ষেত্রে প্রতিটি পোস্টের সাথে আকর্ষণীয় ইমেইজ যুক্ত করা হয়, তবে তা সকলের চোখে পড়তে খুব একটা সময় লাগে না। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও এই ট্রিকস ব্যবহার করা যায়। এতে করে সেল হওয়ার সম্ভাবনা শতগুন বেড়ে যায়।
কমেন্ট করাঃ
আপনার সার্ভিস বা পণ্য সম্পর্কিত পোস্টগুলিতে কমেন্ট করতে পারেন। এটি আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাকলিংক তৈরিতে সাহায্য করবে। অনেকেই বিভিন্ন সাহায্য বা সমাধান চেয়ে পোস্ট করে। আপনি চাইলে সেসব পোস্টগুলিতে সমাধানসহ নিজের সার্ভিস বা পণ্যের প্রমোট করতে পারে। এতে করে গ্রাহক পরবর্তী কোনো পণ্য কিনতে চাইলে সবার আগে আপনার কথা মাথায় রাখবে। এটি গ্রাহককে পণ্য বা সার্ভিস কিনতে রাজি করানোর অন্যতম সেরা টেকনিক হিসেবে কাজ করে।
নির্দিষ্ট সময়ে পোস্ট করাঃ
দিনে অসংখ্য পোস্ট করলেও কিছুই হবে না, যদি নির্দিষ্ট সময়ে পোস্ট আপলোড করার ব্যবস্থা না করা হয়। এক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল সিডিউল পোস্টিং টুলস ব্যবহার করতে পারেন। যেমন Buffer, Hootsuite, and Edgar। এসব টুলস ব্যবহার সহজ হলেও সবচেয়ে ভালো হয় কোনো সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারকে হায়ার করা। এতে নিরাপত্তা, স্ক্যামিং এবং মানসম্মত কাজ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত থাকা যাবে৷
কন্টেন্টের পুনর্ব্যবহারঃ
সবসময় নতুন নতুন কন্টেন্ট আপলোড করার চেষ্টা করুন। এটি যদি সম্ভব না হয় পুরোনো কন্টেন্ট এডিট করে আপলোড করার চেষ্টা করুন। অবশ্যই এতে নতুনত্ব থাকতে হবে৷ মনে রাখতে হবে কোনো গ্রাহক যেনো কোনো প্রকার বিরক্তিবোধ না করে। পোস্ট সিডিউলকে মাথায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে পুরোনো কন্টেন্টকে কাজে লাগান।
ফেইসবুক পেইজঃ
সঠিকভাবে ফেইসবুক পেইজ পরিচালনা করুন। নিয়মিত তাতে ইমেজযুক্ত কন্টেন্ট আপলোড করুন। পেইজের ইনবক্সের উদ্দেশ্যে ইনস্ট্যান্ট রিপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করুন। গ্রাহকের যেকোনো প্রশ্নে দ্রুত সাড়া দিন৷
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের জন্য এবং সোশ্যাল মিডিয়া এবং আপনার ওয়েবসাইটে নিয়মিত পোস্ট দেখার বা জানার জন্য আপনার গ্রাহকের একাংশের কাছে নিজেকে পৌঁছানো প্রয়োজন। এই প্ল্যাটফর্মগুলি আপনার কাজকে সকলের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে। যা ব্যবসার জন্য বেশ লাভজনক।
সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি ওয়েবসাইটের দিকেও নিয়মিত নজর রাখা প্রয়োজন। এবার চলুন সে-সম্পর্কে জানা যাক।
রক্ষণাবেক্ষণ এবং সমস্যা সমাধানঃ
আপনার ওয়েবসাইটের একটি ব্যাকআপ করে রাখুন। যাতে পরবর্তীতে যেকোনো প্রয়োজনে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি এটি আপনার ওয়েবসাইটের ডাটা নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে।
আপডেট রাখুনঃ
প্রতি মাসে অন্তত একবার সাইট পরীক্ষা করুন। কোনো কোডিং সম্পর্কিত সমস্যা কিংবা হোস্টিং সম্পর্কিত সমস্যা থাকলে অতিদ্রুত তা সমাধান করার চেষ্টা করুন। প্রুফরিডার দ্বারা প্রতিটি ওয়েব পেইজ চেক করিয়ে নিন।
এসইও করুনঃ
সাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রিয় খাবার বানাতে সাইটের এসইও করুন। এটি আপনার সাইটকে জনপ্রিয় করে তুলতে সাহায্য করবে। কেননা এই একটিমাত্র উপায়ই পারে সাইটের সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পাতায় সাইটকে শো করাতে।
নিয়মিত কন্টেন্ট আপলোডঃ
সাইটে নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়ে কন্টেন্ট আপলোড করা বেশ জরুরি৷ এতে অডিয়েন্স বুঝতে পারবে তারা বেশ প্রফেশনাল একটি ব্র্যান্ডের সাথে পরিচিত হয়েছে এবং তারা নিয়মিত কন্টেন্ট পড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে অপেক্ষা করবে।
ভুল লিঙ্কগুলি সরানঃ
অনেকসময় দেখা যায় সাইটে বেশকিছু ভুল কিংবা ভেঙে যাওয়া লিংক থাকে। এসব ব্যবহারে হয়তো কোনো কাজ করে না কিংবা ভুল পেইজে নিয়ে যায়। যা অডিয়েন্সের জন্য বেশ বিরক্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সুতরাং অডিয়েন্স হারাতে না চাইলে সাইটে থাকা ভেঙে যাওয়া এবং ভুল লিঙ্কগুলি অপসারণ করতে হবে।
ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ারঃ
সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে আপনি আপনার সাইটে প্রচুর ভিজিটর আনতে পারেন। এতে করে যেমন আপনার কোম্পানির জনপ্রিয়তা বাড়বে, তেমনই বাড়বে সেলিংয়ের হার। নিয়মিত ওয়েবসাইটের পোস্ট লিংকগুলি সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ক্যাপশনের সাহায্যে পেইজ বা প্রোফাইলে শেয়ার করুন। এতে করে সোশ্যাল মিডিয়া ভিজিটরেরা সরাসরি সাইটে ভিজিট করার সুযোগ পাবে।
আমাদের সেবাসমূহঃ
আপনি চাইলে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট এবং ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্টের কাজ একইসাথে আমাদের মাধ্যমে করিয়ে নিতে পারেন। আমরা দিচ্ছিঃ-
ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রেঃ
- ওয়েবসাইটে ট্রাফিক জেনারেশন রিপোর্ট
- নিয়মিত কন্টেন্ট আপলোড
- বিভিন্ন প্রয়োজনীয় আপডেট সুবিধা
- স্ক্যামিং কন্টেন্ট সরানো
- বিভিন্ন প্রোডাক্ট এড করা
- কাস্টমারের প্রশ্নের উত্তর
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রেঃ
- নিয়মিত এক্টিভ থাকা
- পোস্ট পাবলিশ করা
- ব্র্যান্ডিং সার্ভিস ইত্যাদি
পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত যেকোনো সাহায্য পেতে এখনই যোগাযোগ করুন।
শেষ কথাঃ
এখনকার দিনে সোশ্যাল মিডিয়া হলো একটি মানুষের নিত্যদিনকার সাথী। দিনের বেশিরভাগ সময় অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় দিয়ে থাকে। এই দলে হয়তো আপনার টার্গেট করা অডিয়েন্সও থাকতে পারে। যা কাজে লাগিয়ে নিজের অনলাইন বিজনেস দাঁড় করাতে পারেন সহজেই। পাশাপাশি ওয়েবসাইট তো রয়েছেই। একটি ওয়েবসাইট প্রফেশনালি আপনার কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করবে৷ এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে যুক্ত করা সোশ্যাল লিংক হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন লিংক যুক্ত করে দিতে পারেন। সাথে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল বা পেইজের অংশে ওয়েবসাইট লিংকটিকে এড করে দিতে পারে। এটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইটের ভিজিটরের ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করবে৷