You are currently viewing অনলাইন ব্যবসায় ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ এর গুরুত্ব

অনলাইন ব্যবসায় ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ এর গুরুত্ব

বর্তমানে এই সময় টা তে সবার কাছে ঘরবন্দি জীবন যেনো এক দূর্বিষহ বেপার হয়ে দাড়িয়েছে। এই করুন অবস্থা কাটাতে বর্তমানে চোখে পড়ে হাজারো নারী উদ্দোক্তা। যারা তাদের বিজনেস এর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন মার্কেট প্লেস কে। কেও কেও বা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে স্বাবলম্বী করতে অনলাইন এ টুকটাক বিজনেস খুলে বসেছে। এখন অনলাইন ব্যবসা মানেই যেনো সেটা ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম কে কেন্দ্র করে ব্যবসা করা কে বোঝায়। কারণ বাংলাদেশের মানুষ ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি কম ব্যবহার করে কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রায় ৯০% লোকের-ই তাদের নিজেদের ফেসবুক আইডি আছে। ফেসবুক কর্তৃক প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫৫ মিনিট ফেসবুক ইউজ করে থাকে। আর এ সময় ব্যক্তি টি তার নিজস্ব ফেসবুক এর নিউজ ফিড স্ক্রল করাসহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন বিজনেস এর পেইজ কিংবা গ্রুপ এর কন্টেন্ট গুলো দেখে থাকে। এই সমস্ত কারণে সবাই এখন বিজনেস টা কে ফেসবুক এর মাধ্যমেই গ্রো করতে চায় কারণ এখানে তারা প্রচুর পরিমাণে ক্রেতা পায়। আপনার যদি একটি অনলাইন ব্যবসা থাকে এবং আপনি যদি ব্যবসাটা কে বড় করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার উচিত হবে ফেসবুক পেইজ এবং ফেসবুকে গ্রুপ খুলে নেওয়া। ফেসবুক পেইজ এবং ফেসবুক গ্রুপ খোলার মাধ্যমে আপনার বিজনেস এর যে যে পরিবর্তন আসবে তা এই আর্টিকেল এ তুলে ধরা হবে। তাই আপনি যদি নতুন উদ্দোক্তা হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই আর্টিকেল টা আপনার পড়া উচিৎ কারণ এই আর্টিকেল টা পড়ার মাধ্যমে আপনি অনলাইন বিজনেস এর ক্ষেত্রে ফেসবুক পেইজ এবং গ্রুপ এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন। 

ফেসবুক পেইজ:

বাংলাদেশের ১ নম্বর বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ফেসবুক। এক জরীপে দেখা গেছে, এখানে প্রতি মাস শেষে মিলিয়ন মিলিয়ন এক্টিভ ইউজার ফেসবুক ইউজ করে। তাই আপনি যদি আপনার বিজনেস টা কে বড় করতে চান তাহলে আপনার একটা ফেসবুক পেইজ থাকা আবশ্যক। আপনি নতুন উদ্দোক্তা হলে আজই আপনার বিজনেস এর একটি ফেসবুক পেইজ খুলে ফেলুন। বিজনেস পেইজ ওপেন করা খুবই সহজ এবং ফেজবুক পেজ তৈরি করতে আপনাকে কোনো পে করতে হবে না। ফেসবুক পেইজ তৈরির মাধ্যমে আপনি আপনার বিজনেস এর পরিচিতি বৃদ্ধিসহ সেল জেনারেট করতে পারবেন।  পেইজ এর এরকম আরও অনেক গুরুত্ব রয়েছে নিচে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো। 

পরিচিতি বৃদ্ধির জন্যঃ

ফেসবুক পেইজ/গ্রুপে যেহেতু হাজার হাজার মানুষ থাকে তাই এতে আপনার বিজনেস এর পাবলিসিটি বৃদ্ধি পাবে। এবং এখানে কাস্টমার বাড়াতে আপনার কোন খরচ-ই হবে না। শুধু মাত্র আপনি আপনার বিজনেস প্রোডাক্ট এর  আকর্ষণীয় অফার ও নতুন পণ্য সম্পর্কে পোস্ট দিলেই কাস্টমাররা পছন্দসই পণ্য টি কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে। 

যোগাযোগ বৃদ্ধি করে:

আপনার একটি পেইজ থাকলে আপনার বিজনেস এর প্রোডাক্ট সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে অথবা আপনার প্রোডাক্টগুলো কেও কিনতে চাইলে আপনার ফেসবুক পেইজ এর মাধ্যমে আপনাকে মেসেজ করতে পারে। এর ফলে আপনার সাথে কাস্টমারদের যোগাযোগ বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। 

সীমাবদ্ধতা নেইঃ

অনেকেই দেখা যায় নতুন উদ্দোক্তা হওয়ার পর নিজস্ব ফেসবুক আইডি এর মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে। কিন্তু এর ফলে কাস্টমারের সংখ্যার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আপনার ফেসবুক আইডি এর মাধ্যমে আপনি ব্যবসা চালাতে চাইলে আপনাকে প্রতিজন কে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিতে হবে, কেও কেও আবার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট না ও করতে পারে। আবার ফেসবুক আইডি তে আপনার ফ্রেন্ড সংখ্যা মাত্র ৫ হাজার। এর বেশি যেহেতু আপনি ফ্রেন্ড বানাতে পারবেন না তাই আপনার ব্যবসাটাও মাত্র ৫ হাজার লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো কিন্তু আপনার যদি পেইজ থাকে তাহলে আপনার ব্যবসায় কাস্টমার থাকবে ইনফিনিটি। ফেসবুক পেইজ এর মেম্বার সংখ্যা  নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে না। আপনি আপনার ফেসবুক আইডি এর সমস্ত ফ্রেন্ড কে আপনার পেইজ এ ইনভাইট করতে পারবেন। আবার যে কেও চাইলেই আপনার ফেজবুক পেইজ এ লাইক দিতে পারে। ফেসবুক পেইজ এর মেম্বার সংখ্যা নির্দিষ্ট না থাকায় আপনি যত খুশি মেম্বার এ্যাড করতে পারবেন, এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এবং এর ফলে আপনার ব্যবসার পরিচিতি বাড়ার পাশাপাশি সেল ও ভালো হবে। 

ব্র্যান্ডিংব্র‍্যান্ডিং লুকঃ

ফেসবুক আইডি থেকে আপনি যদি ব্যবসা পরিচালনা করেন তাহলে আপনি আপনার টাইমলাইন এ নিজের ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস, ছবি ও শেয়ার দিচ্ছেন আবার এদিকে বিজনেস এর প্রোডাক্টসের পিক ও আপলোড দিচ্ছেন। এর ফলে কখনোই আপনার প্রোডাক্টসের ব্র‍্যান্ড ইমেজ তৈরি  হবে না। এবং আপনার কাজ কে কেও প্রফেশনালি ভাববে না। কিন্তু আপনার একটি ফেসবুক পেইজ থাকলে তাতে কখনোই ব্যক্তিগত ও বিজনেস এর প্রোডাক্ট আপলোড করা নিয়ে ঝামেলায় পরতে হবে না। এতে আপনার বিজনেসের একটা ব্রান্ডিং লুক আসবে। 

প্রোডাক্টসের বিজ্ঞাপনঃ

যারা বিজনেস পেইজ ব্যবহার করে, ফেসবুক তাদের কে পোস্ট বুস্ট করার সুযোগ করে দিয়েছে। এই অসম্ভব সুন্দর ফিচারটি ব্যবহার করে একজন বিজনেস পেইজ ব্যবহারকারী চাইলেই তার পোস্ট কে বিজ্ঞাপন আকারে টার্গেটেড কাস্টমার এর সামনে তুলে ধরতে পারে। আর এই ধরনের পোস্ট বুস্টিং এর মাধ্যমে আপনার সেল ও বাড়বে। 

ফেসবুক পেজ মোবাইল ফ্রেন্ডলিঃ

বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষ-ই মোবাইল দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে৷ এই জন্য ওয়েবসাইটগুলো কে মোবাইল ফ্রেন্ডলি করার জন্য রেস্পন্সিভ ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। কিন্তু ফেজবুক পেইজ এ এরকম কোনো ধরনের ঝামেলা নেই৷ আপনি চাইলে ফোন কিংবা পি.সি সব সাইজ এই ফেসবুক পেইজ এর কন্টেন্ট গুলো দেখতে পারবেন। 

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাঃ 

ফেসবুক পেইজ এর একটা সুন্দর ফিচার হলো ” pages to watch” এই ফিচারটির মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজনেস ম্যান কারা। এই প্রতিদ্বন্দ্বী অনলাইন বিজনেস ম্যানদের কে টপকাতে আপনি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আপনার প্রোডাক্টগুলোর মান আরও ভালো করতে পারেন। এর ফলে আপনার অনলাইন বিজনেস টি-ই থাকবে সবার শীর্ষে।

দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়ঃ

একটি ফেসবুক পেইজ এর মাধ্যমে আপনি শেয়ার করে বিজনেস করতে পারবেন। বিজনেস টা বড় হয়ে গেলে আসলে একা একা সামাল দেওয়াটা ও খুব ঝামেলার বেপার। তাই ফেসবুক পেইজ এর মাধ্যমে আপনি এডমিন হওয়ার পাশাপাশি ইনসাইড এনালিস্ট, এডভারটাইজার, মডারেটরদের কেও নিয়োগ দিতে পারবেন। এতে আপনার ব্যবসাটার প্রতিটি সেক্টরের কাজ-ই সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হবে। 

উপরের পয়েন্টগুলো পরে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন ফেসবুক পেইজ থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।  এবার চলুন ফেসবুক গ্রুপের গুরুত্ব তুলে ধরা যাক।

ফেসবুক গ্রুপঃ

ফেসবুক পেইজ এর মতোই ফেসবুক গ্রুপ ও আপনার ব্যবসা প্রশারে সহায়তা করবে। ফেসবুকে আপনার বিজনেসের একটি ফেজবুক গ্রুপ থাকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিচে তুলে ধরা হলো। 

ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে কাস্টমারদের বিশ্বাস অর্জন: 

আপনার যখন একটি ফেসবুক গ্রুপ থাকবে অনলাইন বিজনেস এর তখন কাস্টমার পন্যটি কেনার সময় আপনার প্রতি বিশ্বাস ইস্থাপন করতে পারবে। একজন কাস্টমার যখন দেখবে আপনার বিজনেস এর একটি অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে এবং আপনি তাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর কমেন্ট এর মাধ্যমে দিচ্ছেন তখন কাস্টমাররা ভাববে যে আপনার বিজনেস টি রিয়াল। তাই তারা তখন আপনার প্রতি আস্থা রাখতে পারবে। এভাবে আপনি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে কাস্টমার দের মনে আস্থার যায়গা করে নিতে পারবেন। এবং একবার যদি কাস্টমার দের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হন তাইলে সেই কাস্টমার আপনার থেকে রেগুলার প্রডাক্ট নিবে। সুতরাং ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে আপনি এবং আপনার কাস্টমার এর ভেতর সুন্দর সেতুবন্ধন তৈরি  হবে। 

ইংগেজমেন্ট বৃদ্ধিঃ

ফেসবুক গ্রুপ এ প্রোডাক্ট এর লাইভ, প্রোডাক্টগুলোর পোস্ট, কমেন্ট বক্সে কাস্টমারদের রিপ্লে করার ফলে আপনি কাস্টমার দের সাথে ইংগেজ হতে পারবেন। এতে তারাও আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। 

রিভিউঃ

আপনার কোন কাস্টমার যখন আপনার একটি প্রডাক্ট ক্রয় করবে, তখন সে প্রডাক্টটি ইউজ করে বেনিফিট পেলে অবশ্যই রিভিউ দিবে। গ্রুপে প্রডাক্ট রিভিউ এর সু- ব্যবস্থা রয়েছে। একটি কাস্টমার যখন আপনার প্রোডাক্ট এর পজিটিভ রিভিউ দিবে তখন কাস্টমারটির আপনার প্রতি স্যাটিসফ্যাকশন প্রকাশ পাবে। পুরাতন কাস্টমার রিভিউ দেওয়ার আরও একটি সুফল হলো এতে করে আপনার গ্রুপে নতুন যারা যুক্ত হয়েছে তারা আপনার প্রোডাক্ট টি কিনতে আগ্রহী হবে। 

পরিশেষেঃ

উপরে উল্লেখিত গুরুত্ব ছাড়াও পেইজ এবং  গ্রুপ এর আরও অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আর্টিকেল টা যদি মনোযোগ দিয়ে আপনি পড়ে থাকেন তাহলে হয়তো বুঝবেন আপনার ব্যবসার পরিচিতি লাভ,সেল জেনারেট বৃদ্ধি, কাস্টমারদের সাথে ইংগেজমেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে পেইজ এবং গ্রুপ এর গুরুত্ব কতটা! তাই আপনি যদি নতুন উদ্দোক্তা হয়ে থাকেন আজই খুলে ফেলুন আপনার অনলাইন বিজনেস এর জন্য একটি অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ এবং গ্রুপ!

Facebook Comment