ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অ্যাডভার্টাইজিং করার জন্য ফেসবুক এবং গুগল জায়ান্ট প্ল্যাটফর্ম। উভয় প্ল্যাটফর্মেরই বিলিয়ন বিলিয়ন ইউজার আছে এবং ডাটা স্ট্রাকচার সেট করা আছে যা ছোট বড় কোম্পানিকে তাদের আইডিয়াল কাস্টমারের সামনে অ্যাড শো করার সিস্টেম আছে। উভয় প্ল্যাটফর্মেরই অডিয়েন্স সাইজ সেট এবং অডিয়েন্স টার্গেট করার সুন্দর সিস্টেম আছে।
যে কোন এক প্ল্যাট ফর্মে অ্যাড রান করার বাজেট থাকলে গুগল এবং ফেসবুক কোনটিতে অ্যাড রান করবেন তা সিলেক্ট করা জটিল হয়ে পড়ে। অ্যাড রান করার ক্ষেত্রে একটি বিষয় সর্বদাই গুরুত্ব দিবেন আপনার যে কোন একটা ছোট স্টেপ ভূল হলে আপনার সম্পুর্ন ক্যাম্পেইন ফেইল করবে। রেজাল্ট মনের মত হবে না অথবা শুন্য হবে। এজন্য ডিসিশন নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে বুঝে শুনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কোন প্ল্যাট ফর্মে অ্যাড দেওয়া ভাল হবে আপনাকে সরাসরি না বলে কিছু সহজ প্রশ্নের উত্তর খুজে নিলেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন আপনার জন্য কোন প্ল্যাটফর্মে অ্যাড দেওয়া বেস্ট হবে। তার পূর্বে জেনে নিই ফেসবুক অ্যাড এবং গুগল অ্যাড কি?
ফেসবুক এড
অন্য যে কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের চেয়ে ফেসবুক একক ভাবে বিশাল প্ল্যাটফর্ম যা পৃথিবীব্যাপী ১.৬ বিলিয়ন মানুষকে একে অপরের সাথে কানেক্টেড করেছে। একই সাথে ছোট আকারের বিজনেসকেও বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের সাথে পরিচিত করার সুযোগ তৈরি করেছে। ফেসবুক এড ম্যানেজারের মাধ্যমে অ্যাড রান করার জন্য ফেসবুকে ক্যাম্পেইন তৈরি করা হয়। অ্যাড ক্যাম্পেইন সেট করার সময় অডিয়েন্স টার্গেট করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন।
অডিয়েন্স টার্গেট বলতে লোকেশন, প্রোফাইল ডাটা, এবং আরও ডেমোগ্রাফিক ডাটার দরকার হয় যা কাজকে ত্বরান্বিত করে। অ্যাড রান করার ক্ষেত্রে আপনি কোথায় কোথায় অ্যাড শো করাতে চান তা নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন এবং সেগুলো জায়গাতেই অ্যাড শো করাবে। ইন্সটাগ্রাম, মেসেঞ্জার, অথবা কোন ডিভাইসে অ্যাড শো করাবেন মোবাইল নাকি ডেস্কটপ তা ও আপনি নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন। যে কোন অ্যাড ক্যাম্পেইনের পার্ফোমেন্স কেমন হচ্ছে তাও আপনি স্বচক্ষে দেখতে পারবেন। দরকার পড়লে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
ফেসবুক এড এর গুরুত্বঃ
ফেসবুক এড যে কোন বিজনেসের নিম্নলিখিত মেজর বিষয় নিশ্চিত করে।
- বিজনেসের ব্র্যান্ডিং বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে
- কাস্টমার ইংগেজমেন্ট বৃদ্ধি পায়
- যে কোন বিজনেসের লিড জেনারেট করার সহজ উপায়। ম্যাক্সিমাম লিড গুলো কাস্টমারেও কনভার্ট হয়।
- ওয়েবসাইটে ট্রাফিক ড্রাইভ করে থাকে যা ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট গুলোতে অডিয়েন্স রিচ বৃদ্ধি করে
- ওয়েবসাইটে আপকামিং ইভেন্ট বা ইমেইল সাবস্ক্রাইব বা ই-বুক থাকলে সেগুলো লিড কালেক্ট করার জন্য উপকারি হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন অফার চলাকালীন সময়ে এদের কাছে মার্কেটিং করা যায়।
উপরোক্ত কারনে ফেসবুক অ্যাড আপনার বিজনেসের জন্য গুরুত্বপূর্ন।
গুগল এডস
PPC Advertising এর ক্ষেত্রে গুগল এডস সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। গুগল অ্যাডভার্টাইজিং প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে এটা বৃহৎ পরিসরে ব্যবহার হয়। আমারা “পেইড সার্চ” এই অপশনের সাথে সকলেই পরিচিত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। তবে একই বিষয় বিং অ্যাডের ক্ষেত্রেও পরিচিত। গুগল এডস এর মত বিং অ্যাডও একই ভাবে কাজ করে। কিন্তু গুগল সার্চ ইঞ্জিনের ইউজার বেশি হওয়ার কারনে গুগল অ্যাড বেশী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আপনার ওয়েবসাইট থেকে রেভিনিউ জেনারেট করার জন্য পেইড মার্কেটিং মেথড ইউজ করে থাকে। মার্কেটিং করার জন্য আপনাকে স্ট্রাটেজি তৈরি করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। স্ট্রাটেজি ফুল প্রুফ হলে সেল জেনারেট হয়।
২০১৯ সালের জরিপ অনুযায়ী দেখা গেছে ছোট-বড় যে কোন বিজনেস তাদের মার্কেটিং করার জন্য গুগল অ্যাডস ব্যবহার করে বা ডলার খরচ করে থাকে। এদের মধ্যে ম্যাক্সিমাম সংখ্যক ব্র্যান্ড গুগলে অ্যাড দিয়ে থাকে। ২০২০ সালের জরিপে দেখা যায় গুগল অ্যাডের সবচেয়ে বেশি পরিমান ক্লিক টু একশন রেট ( CTR )। যা অন্য যে কোন প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক থেকেও বেশি। এমন হওয়ার কারন হচ্ছে গুগল অ্যাড রিলেভেন্সির উপরে নির্ভর করে অ্যাড শো করে। অ্যাড রান করার জন্য কি ওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম বেশি হলে এবং ঐ কি ওয়ার্ডের উপর যদি বিড বেশি পড়ে তারপরও গুগল সার্চ ইন্টেন্ট এর নির্ভর করে অ্যাড শো করে।
মার্কেটিং শুধু একবারই করার দরকার পড়ে না। বরং বিভিন্ন অকেশনে অফার চলাকালে আপনাকে পুনারায় মার্কেটিং করার দরকার পড়ে। এই বিষটিকে রি-মার্কেটিং বলে। গুগল অ্যাড রি-মার্কেটিং করার পদ্ধতি আরও সহজ করে দিয়েছে। কিভাবে সহজ করে দিয়েছে তা বুঝিয়ে বলি।
ধরুন আপনার ওয়েবসাইটে কেউ কোন কিছু কিনতে আসছে পছন্দ অনুযায়ী প্রোডাক্ট শপিং কার্টে অ্যাডও করছে কিন্তু পারচেজ কমপ্লিট করেনি। এখন তাদের কাছে আপনি পুনারায় মার্কেটিং করতে পারবেন। এছাড়াও গুগল অ্যাডস এর কিছু সিম্পল এবং এডভান্সড ফিচার আছে যা আপনার ক্যাম্পেইন সম্পূর্ন ট্র্যাক করতে পারবেন এবং অনায়সেই রিপোর্ট তৈরি করে সে অনুযায়ী পরবর্তী ক্যাম্পেইন এবং রেভিনিউ জেনারেট করতে সহযোগিতা করে।
আপনি কোথায় অ্যাড দিবেনঃ
এত কিছুর আলোচনার পর আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে উভয় জায়গাতে অ্যাড দিলে সুবিধা আছে। কিন্তু কোথায় অ্যাড দেওয়া আমার জন্য পার্ফেক্ট হবে। এমন কনফিউশনে থাকলে আপনাকে শুরুতে কয়েকটি অ্যাড রান করে দেখতে হবে কোন অ্যাডের পারর্ফোমেন্স কেমন। আডের পারর্ফোন্সের মধ্যে যেটির CTR বেশি এবং কনভার্শন রেট বেশী সেই অ্যাডের স্ট্র্যাটেজি বেশি কার্যকরী। গুগল এবং ফেসবুকে আলাদা আলাদা জায়গায় কয়েকটি ক্যাম্পেইন রান করলে আপনি এই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। যে প্ল্যাটফর্ম থেকে আপনার রেস্পন্স ভাল আসবে সেখানে আপনি অ্যাড রান করবেন। এভাবে মার্কেটাররা মার্কেটিং করার বিভিন্ন ক্যাম্পেইন রান করে থাকে।
ফেসবুক অ্যাড এবং গুগল অ্যাড উভয় ক্ষেত্রেই আপনার টার্গেটেড কাস্টমার আছে। কিন্তু বিজনেস যেমন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে তেমনি লোকেশনভেদে আপনার বিজনেসের চাহিদাও কম বেশি রয়েছে। এই কারনে যে কোন অ্যাড রান করার সময় লোকেশন নির্দিষ্ট করে দিতে হয়। আপনার প্রোডাক্টের কোন বয়সের মানুষের জন্য পার্ফেক্ট তাও আপনি নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন। ফলে আপনাকে নির্দিষ্ট লোকেশন অনুযায়ী নির্দিষ্ট বয়সের কাস্টমারদের টার্গেট করা যায়। যা আপনার বিজনেসের সেল বৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করে।
ফেসবুক এডের ক্ষেত্রেঃ
এক্ষেত্রে ইউজার প্যাসিভ হিসেবে কাজ করে। কারন ইউজার তৎক্ষনিক ভাবে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস খুজতে নাও পারে। আপনার অ্যাড দেখে ইউজার পরবর্তীতে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিতে পারে। ইউজারের ডেমোগ্রাফিক ইন্টারেস্ট, লাইফ ইভেন্ট, লোকেশন এবং ইউজারের বায়িং বিহেভিয়ার দেখে সবকিছু সেট করে দেওয়া যায়। ফেসবুক অ্যাডের ক্ষেত্রে অ্যাড প্লেসমেন্ট অপশন থাকে।
সেসব স্থানে আপনি অ্যাড প্লেস করাতে পারবেন। ফেসবুক ফিড, স্টোরি, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, ইন স্ট্রিম ভিডিও সহ ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইন্সটাগ্রাম এবং এদের স্টোরিতে অ্যাড দেখানোর সুযোগ থাকে। ফেসবুক অ্যাড দেওয়ার সময় ইমেজ, ভিডিও, স্লাইডশো, ক্যারোসেল ইত্যাদি ধরনের অ্যাড দেওয়া যায়। এদের এভারেজ ক্লিক থ্রো রেট এবং কনভার্শন রেট তুলনামূলকভাবে বেশী। আপনি যদি নতুন হয়ে থাকেন এবং কিভাবে অ্যাড দিবেন তা বুঝতে না পারেন তাহলে ভিজিট করুন
গুগল এডস এর ক্ষেত্রেঃ
গুগল অ্যাডের ক্ষেত্রে ভিউয়াররা একটিভলি ইউজাররা প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসের জন্য সার্চ করে থাকে। তদের উদ্দেশ্যই থাকে তারা তাদের পছন্দের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিনবে। গুগল অ্যাড টার্গেট করার জন্য ইউজারের লোকেশন এবং সার্চ ইন্টেন্টের উপর নির্ভর করে অ্যাড শো করায়। গুগল অ্যাড শো করানোর জন্য নিজেদের পাশাপাশি তাদের পার্টনার প্রোগ্রাম প্ল্যাটফর্ম গুলোতেও অ্যাড শো করায়। অ্যাডের ধরন টেক্সট, ডিরেক্ট কল এবং শপিং অ্যাড। এছাড়া অন্য কোন ধরনের অ্যাড হয়ে থাকে না। গুগল আডের ক্ষেত্রে ক্লিক থ্রু রেট এবং সিপিসি ফেসবুক অ্যাডের চেয়ে বেশী।
ফেসবুক এড VS গুগল এডস
পরিশেষেঃ
গুগল অ্যাডের এবং ফেসবুক অ্যাডের উদ্দেশ্য সম্পূর্ম ভিন্ন। ফেসবুক অ্যাড আপনি আপনার ব্র্যান্ডের অ্যাওয়ারনেস এবং সার্ভিস ভালভাবে তুলে ধরার জন্য বেস্ট। এক্ষেত্রে আপনার সার্ভিস সাথে সাথে নেওয়ার চান্স থাকতেও পারে আবার নাও পারে। কিন্তু গুগল অ্যাডের ক্ষেত্রে আপনার টার্গেট হল সেলস বৃদ্ধি করা। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আপনি কতটুকু এরিয়ায় নির্ভর করে অ্যাড দিতে চান।
টার্গেটেড লোকেশন ঠিক থাকলে আপনার সেলস ভাল আসতে থাকবে। ফেসবুক আডের ক্ষেত্রে আপনি আডিয়েন্স টার্গেট করতে পারেন কিন্তু গুগল অ্যাড দেওয়ার সময় কি ওয়ার্ড ( ইউজারের সার্চ ইন্টেন্ট ) টার্গেট করে অ্যাড রান করা হয়। এখন আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন আপনার বিজনেসের জন্য গুগল অ্যাড জরুরি নাকি ফেসবুক অ্যাড জরুরি। অ্যাডভার্টাইজ সংক্রান্ত যে কোন কনসাল্টেশনের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।