একটি ই-কমার্স বিজনেস কে সবার কাছে কম পরিশ্রমে পৌঁছে দেওয়ার উপযুক্ত কিছু মাধ্যম রয়েছে। আমরা অনেকেই ই-কমার্স বিজনেস এর সাথে জড়িত কিন্তু সবার একই কথা তাদের ই-কমার্স বিজনেস অধিক পরিশ্রম করার পরে-ও টার্গেটেড কাস্টমার এর কাছে পৌঁছাতে তারা ব্যর্থ। এর একমাত্র কারন হলো তারা তাদের বিজনেস এর প্রোমোশন সঠিক যায়গায় করে না। যার ফলে বিজনেস এর গ্রোথ সঠিক ভাবে হয় না। এক কথায় উলু বনে মুক্তো ছড়ানোর মতো। ই-কমার্স বিজনেস এ সফল হতে হলে আমাদের জানতে হবে দেশ সেরা জনপ্রিয় কিছু গ্রোথিং চ্যানেল সম্পর্কে। যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ব্যবসা টা কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো বহুদূর। অর্জন করতে পারবো চূড়ান্ত সাফল্য।
এই আর্টিকেল এ আমরা ই-কমার্স বিজনেস এর জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি গ্রোথিং চ্যানেল নিয়ে আলোচনা করবো এবং আপনার বিজনেস কে গ্রো করার জন্য কিছু টিপস শেয়ার করবো।
৬ টি জনপ্রিয় ই-কমার্স বিজনেস গ্রোথ প্লাটফর্ম
ই-কমার্স বিজনেস হলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে কিংবা জনপ্রিয় কিছু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা। ই-কমার্স বিজনেস বলতে আমরা সাধারণ B2C অর্থাৎ বিজনেস থেকে কনজিউমার এর ভেতর যে ব্যবসা পরিচালনা হয় সে টা কে-ই বুঝে থাকি। কিন্তু এর অনেকগুলো শাখা রয়েছে। যাইহোক, B2C ই-কমার্স বিজনেস মেথড টি-ই অধিক পরিচিত। তবে এর পাশাপাশি B2B অর্থাৎ বিজনেস ট্যু বিজনেস ই-কমার্স বিজনেস ও ব্যপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর, বিজনেস গ্রোথ মানে হলো কাস্টমার দের কে তাদের এক্সপেকটেশন অনুযায়ী প্রোডাক্ট প্রোভাইড করা এবং অধিক প্রোফিট জেনারেট করা। বিজনেস এর ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং করার কিছু উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। যেখানে প্রোমোশনাল এডভারটাইজিং, ভিডিও কন্টেন্ট দেওয়ার মাধ্যমে লোকাল কাস্টমারদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব এবং বিজনেস এর পাবলিসিটি বাড়ানো সম্ভব। নিচে এমন-ই কিছু প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ফেসবুকঃ
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে ফেসবুকের অবস্থান সবার শীর্ষে। বলা বাহুল্য, করোনা মহামারীর এই সময় টা তে ফেসবুক ইউজার এর সংখ্যা আগের তুলনায় প্রায় ১ কোটি বেড়ে গেছে। প্রথম আলো -ই – পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের ফেসবুক ইউজার এর সংখ্যা মোট ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার, প্রায় ৫ কোটি। তার মানে দেশের প্রায় ২৮% নাগরিক ফেসবুক ইউজ করে। ইউজারদের মধ্যে পুরুষ ইউজার এর সংখ্যা ৬৯.১ শতাংশ এবং নারীদের সংখ্যা ৩০.৯ শতাংশ। ২০২০ সালে যেখানে ফেসবুক ইউজার এর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ কোটি এখন সেই সংখ্যা টা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি তে। আবার এই গত ১ বছরে যারা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তাদের ভেতর নারীদের সংখ্যা টা-ই বেশি। এর কারণ হলো নারীরা এই ফ্রি সময় টা কে কাজে লাগানোর জন্য ই-কমার্স বিজনেস শুরু করেছে। ই-কমার্স বিজনেস করার একটি সেরা এবং জনপ্রিয় গ্রোথিং প্লাটফর্ম হলো ফেসবুক। ফেসবুকে ই-কমার্স বিজনেস এর প্রোমোশন চালানোর জন্য আমরা ফেসবুকে এড ক্যাম্পেইন চালু করতে পারি। এছাড়াও ফেসবুক লাইভে এসে প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সবাই কে জানাতে পারি৷ ফেসবুকে যেহেতু লোকজনের আনাগোনা বেড়েছে তাই এখানে অনেক অসাধু ব্যাবসায়ীও রয়েছে। যারা অনলাইন ব্যবসার নাম করে খারাপ প্রোডাক্ট দিয়ে সাধারণ জনগণ কে ঠকাচ্ছে এবং সাধারণ জনগণের মনে অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলছে। এই কারণে অনেকে-ই ফেসবুক আইডি দিয়ে বিজনেস করলে তাদের সহজে বিশ্বাস করতে চায় না। এ জন্য আপনাকে অবশ্যই ফেসবুক পেইজ, ফেসবুক গ্রুপ এবং আপনার বিজনেস এর একটি কমার্শিয়াল ওয়েবসাইট ওপেন করতে হবে। এর ফলে আপনি কাস্টমারদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন। আর আপনাদের সুবিধার কথা চিন্তাই করেই আমরা দিচ্ছি রেডি ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর বিশাল সমাহার, যেখান থেকে খুব সহজেই আপনি আপনার পছন্ধের ওয়েবসাইট টি ক্রয় করে নিতে পারেন।
ইউটিউবঃ
ইউটিউব এর মাধ্যমেও আপনি আপনার বিজনেস এর প্রোমোশন চালাতে পারেন। বাংলাদেশে ইউটিউব ইউজার এর সংখ্যা টা ও অনেক । ইউটিউবে আপনি আপনার প্রোডাক্ট এর বিস্তারিত তথ্য ভিডিও কন্টেন্ট এর মাধ্যমে সবাই কে জানাতে পারবেন। আবার আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলে যে ভিডিও আপলোড করবেন তার ডেসক্রিপশন বক্সে আপনার কমার্শিয়াল ওয়েবসাইট এর লিংক দিয়ে দিতে পারবেন। তাহলে ঐ লিংকে ক্লিক করে একজন কাস্টমার সহজেই আপনার প্রোডাক্টগুলো ক্রয় করতে পারবে।
ইন্সটাগ্রামঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এর মতো ইন্সটাগ্রাম ও অনেক জনপ্রিয়। এখানে তাই অনেকেই পেয়েছে তাদের ই-কমার্স বিজনেস এ সফলতা। প্রথম আলো -ই পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ এ ইন্সটাগ্রাম ইউজার এর সংখ্যা ৪০ লাখ ৮১ হাজার যা ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তবে এই সংখ্যা টা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখানে আশার কথা হলো ইন্সটাগ্রাম ইউজারদের প্রায় সকলের বয়স ১৮-২৪ বছরের ভেতর। আর এই যুবক -যুবতীরাই বেশি অনলাইন থেকে প্রোডাক্ট কিনে থাকেন। তাই ইন্সটাগ্রামে আ আপনার ই-কমার্স বিজনেস এর মার্কেটিং করে আপনি পেয়ে যেতে পারেন অনেক রেস্পন্সিভ কাস্টমার। তাই এই সুযোগ হাত ছাড়া করবেন না।
লিংকড-ইনঃ
বাংলাদেশের অধিকাংশ পেশাজীবীদের পছন্দের সোশ্যাল মিডিয়া হলো লিংকডইন। করোনা মহামারীর সময়ে লিংকডইন ইউজার এর সংখ্যা টা ও অনেক বেড়েছে। ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত লিংকডইন ইউজার এর সংখ্যা ছিল ৪১ লাখ ১৭ হাজার। লিংকডইনে যেহেতু পেশাজীবীদের সংখ্যা টা বেশি তাই এখানে ২৫-৩৪ বছরের লোকজনের আনাগোনাই বেশি। লিংকডইন কে যেহেতু মানুষ প্রফেশনালি ব্যবহার করে তাই আপনি এখানে সিরিয়াস কাস্টমার পেয়ে যাবেন। এখানে বি ট্যু সি বিজনেস এর পাশাপাশি বি ট্যু বি বিজনেস ও অনেক বেড়েছে। তাই আপনার ই-কমার্স বিজনেস এর গ্রোথিং চ্যানেল হিসেবে লিংকডইনে প্রোডাক্ট এর প্রোমোশন আপনার বিজনেস এ যোগ করতে পারে এক নতুন মাত্রা।
গুগলঃ
সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলের অবস্থান সবার শীর্ষে। এই প্ল্যাটফর্ম কে ইউজ করে অনেকেই গড়ে তুলেছে তাদের ই-কমার্স বিজনেস। গুগলে আপনার যদি একটি কমার্শিয়াল ওয়েবসাইট থেকে থাকে তাহলে এর মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন হিউজ কাস্টমার। কমার্শিয়াল সাইট টি তে আপনি আপনার বিজনেস এর প্রোডাক্টগুলো ডিসপ্লে করতে পারবেন এবং নিচে প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে দিতে পারবেন। গুগলের মাধ্যমে আপনি দেশ ছেড়ে বিদেশে ও বিজনেস করতে পারবেন। তবে কমার্শিয়াল সাইট টি তে যে কন্টেন্ট পাবলিশ করুন না কেনো সেটা ইউজার ফ্রেন্ডলি হতে হবে। এর জন্য আপনাকে ইউজার ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট পাবলিশ করতে হবে এবং রেস্পন্সিভ কমার্শিয়াল ওয়েবসাইট ভালো এজেন্সি দ্বারা তৈরি করে নিতে হবে। কন্টেন্টগুলো অবশ্যই একজন ভালো এস.ই.ও এক্সপার্ট দ্বারা অপটিমাইজড করে নিতে হবে। কন্টেন্ট অপটিমাইজেশন এর ফলে কোনো কাস্টমার যদি আপনার ওয়েবসাইট এ থাকা কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করে তাহলে আপনার ওয়েবসাইট এর কন্টেন্ট গুগলের ফার্স্ট পেজে শো করবে। আর গুগলের ফার্স্ট পেজে আপনার কন্টেন্ট র্যাংক করলে আপনার বিজনেসে অনেক ট্রাফিক জেনারেট হবে। গুগলের ফার্স্ট পেজে র্যাংক করানোর পদ্ধতি হলো সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর দ্বারা কন্টেন্ট কে গুগলে র্যাংক করাতে পারলে সে টা দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিন্তু পেইড মার্কেটিং ( সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং) এ আপনার থেকে গুগল কে কেও বেশি টাকা দিলে আপনার কন্টেন্টগুলো তার কন্টেন্টগুলো থেকে গুগল নিচে শো করবে। এখন আপনি-ই আপনার ই-কমার্স বিজনেস এর জন্য সেরা মেথড টি বেঁছে নিন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংঃ
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এমন এক মার্কেটিং যেখানে আপনি অন্যের প্রোডাক্ট সেল করে দেওয়ার জন্য মার্কেটিং করবেন ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে। এখানে আপনি যে অন্যের প্রোডাক্ট সেল করে দিবেন তার জন্য সেই ই-কমার্স বিজনেস আপনাকে কিছু কমিশন দিবে। বাংলাদেশের সেরা ১ নাম্বার অনলাইন শপিং দারাজের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং চালু আছে। এরকম আমাজন, আলিবাবা ইত্যাদি ই-কমার্স বিজনেসগুলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুযোগ করে দিয়েছে।
পরিশেষেঃ
আপনার ই-কমার্স বিজনেস কে গ্রোথ করতে চাইলে উপর্যুক্ত যে কোনো প্ল্যাটফর্ম কে আপনি বেঁছে নিতে পারেন। সব কাজেই হার্ড ওয়ার্ক এর পরিবর্তে করতে হবে স্মার্টলি ওয়ার্ক তবেই এই জেনারেশন এর সাথে পাল্লা দেওয়া সম্ভব। আপনার ই-কমার্স বিজনেস এর জন্য ফেসবুক এডভারটাইজিং অথবা কমার্শিয়াল ওয়েবসাইট বানাতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার যেকোনো ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং এর সহায়তায় পাশে আছি আমরা।