বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ শুধু এখন একে অপরের সাথে যোগাযোগ-ই করছে না বরং এর মাধ্যমে গড়ে তুলেছে এক বিশাল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। এটির অগ্রগতির ফলে মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে ফ্রিল্যান্সিং এমনকি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও করছে। তারা তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে এর মাধ্যমে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর নাম শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে যাদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে ধারণা টা কাঁচা তাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য উপস্থাপন এর মাধ্যমে পাকাপোক্ত একটা ধারণা দেওয়াই এই আর্টিকেল টি লেখার মূল উদ্দেশ্য। যে কেও চাইলেই অনলাইন ভিত্তিক একটি সুন্দর ক্যারিয়ার হিসেবে বেঁছে নিতে পারে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। তাহলে চলুন পুরো আর্টিকেল টি পড়ে ফেলি এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি তা জানার আগে জানবো মার্কেটিং কাকে বলে। মার্কেটিং হলো এমন একটি চলমান প্রক্রিয়া যেখানে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য একটি বিজনেসের প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। তাহলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এমন একটি বিষয় যেখানে আপনার নিজের কোনো প্রোডাক্ট থাকবেনা। আমার কথা শুনে হাসছেন নিশ্চয়ই? ভাবছেন আপনার প্রোডাক্ট না থাকলে মার্কেটিং করবেন কিভাবে? হ্যাঁ, এখানে আপনার নিজের কোনো প্রোডাক্ট থাকবেনা ঠিকই কিন্তু অন্যদের প্রোডাক্ট নিয়ে আপনি মার্কেটিং করবেন। সোজা ভাবে বলতে গেলে, আপনার মার্কেটিং দক্ষতা কে কাজে লাগিয়ে বড় বড় কোম্পানির প্রোডাক্ট অ্যাফিলিয়েশনের মাধ্যমে সেল করার প্রক্রিয়া হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এখন ভাবতে পারেন অন্যের প্রোডাক্ট সেল করে আপনার লাভ কি? লাভ নিশ্চয়ই আছে। আপনি যে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেল করে দিবেন তারা আপনাকে প্রোডাক্ট অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দিবে।
এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো? ধরুন, আপনি এবং আমি ছোট বেলার বন্ধু। আমি অনেক বছর ধরেই একটা ব্যবসা শুরু করেছি কিন্তু আপনি এখনো বেকার। আমার ব্যবসাটা বড় হয়ে যাওয়ায় একা সামলানো অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমি আপনাকে অফার করলাম আমার প্রোডাক্টগুলো সেল করে দিতে, বিনিময়ে আপনি প্রোডাক্ট অনুযায়ী কমিশন পাবেন। আপনিও আমার প্রপোজালে রাজি হয়ে গেলেন এবং সবার কাছে প্রচারের মাধ্যমে অনেক প্রোডাক্ট সেল করলেন। দিন শেষে আমার বিজনেসের প্রোডাক্ট সেল করে আপনি মোটা অংকের টাকা কমিশন পেলেন। এই ব্যাপার টা-ই যখন অনলাইনের মাধ্যমে হয়ে থাকে তখন আমরা সেটা কে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলি এবং যে প্রোডাক্টগুলো সেল করে তাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার বলা হয়। আপনি দারাজ, আলিবাবা, এমাজন ইত্যাদির অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?
আমরা প্রায় সবাই কোনো প্রোডাক্ট কেনার আগে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব এর ভিডিও দেখে থাকি। ওয়েবসাইট এ মূলত একজন রাইটার প্রোডাক্ট এর রিভিউ করে থাকে। প্রোডাক্ট এর ভালো দিক, খারাপ দিক তুলে ধরার মাধ্যমে ট্রাফিক জেনারেট করে। এবং আর্টিকেল এর শেষে কিংবা ইউটিউব ভিডিও এর ডেসক্রিপশন বক্সে একটি লিংক তারা এড করে দেয়, যার মাধ্যমে কেও চাইলে প্রোডাক্ট টি ক্রয় করতে পারবে লিংকে ঢুকে। লিংকে ক্লিক করে যদি কোনো ভিজিটর প্রোডাক্ট টি ক্রয় করে তাহলে প্রোডাক্ট অনুযায়ী সে কমিশন পাবেন। এরকম কিছু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংঃ
বর্তমানে অনলাইন বিজনেসগুলোর মধ্যে আমাজন এক নাম্বার স্থান দখল করে নিয়েছে। এতো বড় অনলাইন মার্কেট হওয়ায় আমাজন চালু করেছে অ্যাফিলিয়েশন প্রোগ্রাম। আপনিও যদি হতে চান একজন সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার তাহলে আপনার থাকতে হবে নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট। তারপর আপনি আমাজনের অ্যাফিলিয়েশন প্রোগ্রামের সদস্য হতে পারবেন। এখন আপনার পছন্দসই প্রোডাক্ট আপনি আমাজন থেকে বাছাই করতে পারবেন। আপনার ওয়েবসাইট টি যদি বেবিদের প্রোডাক্ট রিলেটেড হয় তাহলে আপনি আমাজন থেকে বেবিদের প্রোডাক্ট সিলেক্ট করে রাইটারদের কে দিয়ে ওই প্রোডাক্টগুলোর রিভিউ আর্টিকেল লেখান এবং আর্টিকেলের ভেতরে লিংক এড করে দিন। কোনো মানুষ যদি আপনার ওয়েবসাইট এ এসে রিভিউ পড়ে পণ্য টি কিনতে আগ্রহী হয় তাহলে সে ওই লিংকে ক্লিক করবে। সে যদি লিংকে ক্লিক করে পণ্য টি কেনে তাহলে আপনি আমাজন থেকে ৯% কমিশন পেয়ে যাবেন প্রোডাক্ট অনুযায়ী। আর সে যদি লিংকে ক্লিক করার পর পণ্য টি না কেনে তাহলে? তাহলেও চিন্তার কিছু নেই। ওই ভিজিটর যদি ৩০ দিনের ভেতর আমাজন থেকে প্রোডাক্ট টি ক্রয় করে তাহলেও আপনি কমিশন পাবেন। আমাজন থেকে প্রাপ্ত কমিশন প্রোডাক্ট ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। ধরুন আপনি আমাজন এর হয়ে একটি প্রোডাক্ট সেল করে দিলেন যে প্রোডাক্ট এর দাম ১০০ টাকা, তাহলে আমাজন আপনাকে সেই প্রোডাক্ট এর উপর ৯ টাকা কমিশন দিবে।
এরকম অনেক অনলাইন মার্কেট এর অ্যাফিলিয়েশন প্রোগ্রাম চালু আছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ দারাজ, আলিবাবা ইত্যাদি।
একজন সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে যা যা আপনার করণীয়ঃ
উপরে তো অনেক তথ্যই জানা হলো, এবার জানা যাক একজন নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এর সফলতা পাওয়ার জন্য যা যা করণীয়।
পরিকল্পনাঃ
যে কোন কাজ শুরু করার আগেই সেই কাজ সম্পর্কে পূর্ব পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। কোনো কাজ করার আগে যদি ঠিকঠাক মত প্ল্যান সাজিয়ে নেওয়া যায় তাহলে সফলতা আসবেই এটা নিয়ে নিশ্চিত থাকা যায়। আপনাকে আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে ভবিষ্যতে আপনার বিজনেস টা কে আপনি কোন পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ আপনি শূন্য হাতে আসতে পারবেন না। আপনাকে কিছু ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে। যেমনঃ প্রোডাক্টগুলোর রিভিউ লেখানোর জন্য রাইটার দরকার, ভালো ডিভাইস, ভালো নেট কানেকশন এইগুলোর জন্য আপনাকে ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে।
নিশ নির্বাচনঃ
“নিশ” হচ্ছে আপনি যে বিষয়/প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবেন তাকেই নিশ বলা হয়। সুন্দর এবং সময় উপযোগী নিশ বাঁছাই করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিশ বাছাইয়ের সময় সতর্ক থাকুন। এমন নিশ বাছাই করুন যেটি সবার সব সময় প্রয়োজন। আপনি নিশ হিসেবে “স্মার্ট ফোন” কে সিলেক্ট করতে পারেন। কারণ স্মার্টফোনের ব্যপক চাহিদা রয়েছে সব সময়-ই। নিশ বাছাই করার পরে কিওয়ার্ড সিলেক্ট এর মাধ্যমে কাজ শুরু করে দিতে পারেন।
নিজস্ব ওয়েবসাইটঃ
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য যে জিনিস টা মাস্ট লাগবেই তা হলো নিজের একটি ওয়েবসাইট। যেখানে আপনি আপনার আর্টিকেলগুলো রাখতে পারবেন। একজন কাস্টমার এর বিশ্বস্ততা অর্জন করার জন্য একটি ওয়েবসাইট এর গুরুত্ব অনেক।
এসইও করাঃ
আপনার ওয়েবসাইট এ সুন্দর করে আর্টিকেলগুলো সাজালেন কিন্তু এটি যে গুগলে র্যাংক করবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। একটি ওয়েবসাইট কে তাই গুগলের ফার্স্ট পেজে নিয়ে আসার জন্য এসইও করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এস.ই.ও কে সফলতার মূলমন্ত্র হিসেবে তুলনা করা যায়। আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ওয়েবসাইট টি গুগলের ফার্স্ট পেজে র্যাংক করার মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট এ আগের থেকে বেশি ট্রাফিক আসবে। আর যত বেশি ট্রাফিক জেনারেট হবে তত বেশি সেল হবে। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক জেনারেট করতে চাইলে সুন্দরভাবে এস.ই.ও করিয়ে নিবেন।
পরিশেষেঃ
আর আপনি মনের মত এস.ই.ও এক্সপার্ট পেতে চান তাহলে আমাদের yappobd.com এর সাথে যোগাযোগ করুন। আমাদের রয়েছে দক্ষ এস ই ও এক্সপার্ট,যারা সঠিক ভাবে কাজ করে আপনার ওয়েবসাইট কে র্যাংক করতে সহায়তা করে। আপনার আপ কামিং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য শুভ কামনা রইল। এ ছাড়াও আমাদের সকল আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ চোখ রাখুন।